পাথরঘাটা: বরগুনার পাথরঘটায় ৪ থেকে ৫ বছরে শূন্য থেকে কোটিপতি ফ্রিল্যান্সার বেলাল। প্রতিমাসে আয় করছে লাখ লাখ টাকা। বেলাল বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা মাদারতলী চরকখোল গ্রামের যুবক। তার বাবা আলমগীর হোসাইন ছিলেন একজন দিনমুজর। মা আকলিমা বেগম একজন গৃহিনী। অভাব অনটন লেগেই থাকা সংসারে তিন সন্তানের লেখাপড়া ও ভরণপোষন নিয়ে হিমশিম খেতে হতো বেলালের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের।
একদিকে নিজের লেখাপড়া, অন্যদিকে পরিবারের হাল ধরার কথা চিন্তা করে ২০০৪ সালে রাজধানী শহর ঢাকায় পারি জমান বেলাল। সেখানে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা করে ২০০৮ সালে একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন বেলাল।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করেন তিনি। কিন্তু স্বাধীনচেতা মন বেলালকে আটকে রাখতে পারেননি কম্পিউটার অপারেটরের ছোট্ট গন্ডিতে। ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। প্রথমে ফাইভার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম থেকে ১০ ডলার আয় করেন তিনি। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম ফাইভার, আপওয়ার্ক ও ফ্রিল্যান্সার ডট কম সহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করেন তিনি। গড়ে তুলেছিলেন সামি ডট কম নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানও। সেখানে ভার্চুয়ালি ৪০ জন কাজ করেছে তার অধিনে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারের লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের হয়ে ফেনি জেলার প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
এর আগে ২০২০ সালে বাবা আলমগীর হোসাইনের মৃত্যুর পরে ঢাকার পাট চুকিয়ে নিজ গ্রামের বাড়ি চলে আসেন বেলাল। সেই থেকে সেখানে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করছেন তিনি। ফ্রিল্যাসিং থেকে এক মাসে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ডলার সহ এখন তার বাৎসরিক আয় ৩০ হাজার ডলার। বাংলা টাকায় যা ত্রিশ লাখ টাকারও বেশি। ফ্রিল্যাসিংয়ের অর্থ দিয়েই দরিদ্র বাবার ভাঙাচোরা টিনের ঘরটিকে এখন পাকা ভবন, কিনেছেন গাড়ি ও কৃষি জমি। দরিদ্রতাকে খুব কাছ থেকে দেখা বেলাল হোসাইন নিজেই শোনাচ্ছিলেন তার এ সফলতার গল্প।
বেলাল হোসাইনকে দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেলাল হোসেনও স্বপ্ন দেখছেন তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুন ও বেকারদের স্বাবলম্বি করে গড়ে তোলার। তাই নিজ বাড়িতেই আগ্রহী স্থানীয় তরুণ ও যুবকদের শিখিয়ে চলেছেন ফ্রিল্যান্সিং।
বেলাল হোসাইনের কাছে ফ্রিল্যান্সিং শেখেন পাথরঘাটার জাহিদ হাসান অশ্রু ও রিফাত শেখ। কথা হলে তারা জানান, ফ্রিল্যান্সিং করে বেলাল হোসাইনের মত তারাও তারাও স্বাবলম্বী হতে চান। তাই ভালোভাবে শিখতে ও কাজ পেতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা।
বেলল হোসাইন বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতার পেছনে সরকারের লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটি আমার জন্য আশীর্বাদ ছিল। আমি স্বপ্ন দেখি তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের হাজারো তরুন ও বেকাররা স্বাবলম্বি হয়ে দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনবে।
সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, চাকরি বা কাজ, ব্যবসাসহ যে কোন কাজে লক্ষ এবং উদেদশ্য থাকে বা থাকতে হয়। আর সেই উদ্দেশ্য যদি ভালো হয় তাহলে সফল হবেই। চাকরি না করেও ফ্রিল্যান্সিং করে যে সফল হওয়া যায় তার উদাহরণ এই যুবক। এভাবে কাজ করলে অনেক বেকারত্ব কমবে। এখানে এই সফল যুবকের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে সমাজে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া।
এমএস