কলাপাড়া: সাগরে মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বাড়াতে রবিবার (১৯ মে) মধ্যরাত থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গোপসাগরে শুরু হচ্ছে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞা পালনে ইতোমধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এ উদ্যোগ সফল করতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচার প্রচারণাসহ বিভিন্ন যায়গায় তারা মতবিনিময়ের সভা করেছে কলাপাড়ার মৎস্য কর্মকর্তা।
কলাপাড়া উপজেলায় মোট জেলে রয়েছে ১৮ হাজারেরও বেশি তবে শেষ মূহুর্তে এসেও সমুদ্রে মাছ না থাকায় খালি হাতে ফিরছে অনেক জেলে। সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ঘোষিত ৬৫ দিনের সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে রবিবার রাত ১২টায়। এই নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত।
রবিবার পটুয়াখালীর বড়দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর- মহিপুরের জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়াতে জেলেরা পড়বেন অস্তিত্ব সঙ্কটে। একদিকে বছরে দুই বার নিষেধাজ্ঞা। অপরদিকে এই বছর ভরা মৌসুমে সাগরে মাছের আকাল পড়েছে। ঋণের বোঝা এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। এদিকে দীর্ঘ দিন কর্মহীন সময় পার করবেন তারা। তবে সরকার এই ৬৫ দিনের অবরোধের জন্য জেলে প্রতি ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে।
সমুদ্রে বর্তমানে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য শিকার, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ ঘোষণায় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
আলীপুর এলাকার জেলে আ. রহিম জানান, ‘ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এনজিওর লোন টাহার ঋণ লইয়া মানষিক দুশ্চিন্তায় মোর চোঁহে ঘুমে ধরে না। আর মহাজনের দাদনের টাহা কেমনে পরিশোধ করমু। এহন হতাশ অইয়া গেছি।’
আব্দুল্লাহ ট্রলারের মাঝি খবির মিয়া জানান, ‘ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৬০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে, তা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ৬৫ দিনের অবরোধ আসলে এই ঋণ পরিশোধতো দূরের কথা ঋণের বোঝা আরো বেড়ে যাবে।’
মহিপুর আড়ৎদার মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ রাজা বলেন, ‘সরকার সমুদ্রে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও জেলেদের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তবে সেটা যদি মৎস্য পেশাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে তাহলে অতি সম্প্রতি এই পেশায় সংকট দেখা দিবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন সময় এখনো থেকে দেড় মাস বাকি। তাই আমাদের দাবি এই ৬৫ দিনের অবরোধ একমাস পিছিয়ে দেওয়া মাছের প্রজননের সঠিক সময় দেওয়া হোক। এই অবরোধটা মূলত গভীর সমুদ্রের ট্রলিংয়ের জন্য কিন্তু এখন ছোট জেলেদের উপরে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই আইনের সংশোধন চাই আমরা।’
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘জেলেদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলেদের ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও চলছে। তবে এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে যদি কোন দুষ্কৃতিকারী সমুদ্রে মাছ ধরার চেষ্টা করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :