• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

জয়পুরহাটে দ্বিধা দ্বন্দ্বে আওয়ামী-লীগ!  


এম.এ.জলিল রানা, জয়পুরহাট মে ২০, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম
জয়পুরহাটে দ্বিধা দ্বন্দ্বে আওয়ামী-লীগ!  

জয়পুরহাট: দ্বিতীয় ধাপে জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ,উত্তপ্ত মাঠ আর দ্বিধা দ্বন্দ্বে আ-লীগ এবং ভোট গ্রহন ২১ মে।শেষ সময়ে বেশ জমে উঠেছে সদর উপজেলার নির্বাচন।ক্ষমতাসীন আ-লীগের তিন প্রার্থীই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। আর নির্বাচনী মাঠ জমে উঠতে দুই এমপি ও জেলার আ-লীগের এক নেতার সমর্থন অনেকটায় আরও সহজ করে দিয়েছে। তবে এই তিন প্রার্থীর সমর্থন দেওয়ায় উপজেলায় আ-লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পড়েছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ।

দ্বিতীয় ধাপে জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামীকাল ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে।  নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সদর উপজেলায় ৫ও পাঁচবিবি উপজেলায় ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর দুই উপজেলায় দুজন প্রার্থী দলবিহীন, ৮ জন আ-লীগ নেতা ও ১জন যুবলীগ নেতা রয়েছেন।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনী বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলায়।এখানকার ৩ জন প্রার্থী দুই সাংসদের ও জেলা আ-লীগের এক নেতার সমর্থন পেয়েছেন। দুই সাংসদ নিজেদের মর্যাদা ও আধিপত্য ধরে রাখতেই দুই প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন জেলা আ-লীগের এক নেতা। তিনিও এক প্রার্থীকে সমর্থন দেন। এরপর থেকেই জেলা আ-লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। আর প্রচার-প্রচারণায় একে-অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিতে থাকেন।

আ-লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয় নেতারা প্রথমে দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন।একভাগ সদর উপজেলা আ-লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের পক্ষে এবং আরেক ভাগ সদর উপজেলা আ-লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান মিঠুর পক্ষে।এ দুজনের মধ্যে হাসানুজ্জামান মিঠু জয়পুরহাট-১ আসনের সাংসদ সামছুল আলম দুদুর সমর্থন পেয়েছিলেন। আর আনোয়ার হোসেন আ-লীগের সমর্থন পেলেও এমপির সমর্থন পাননি। হঠাৎ-ই জেলা আ-লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এ ই এম মাসুদ রেজা বাংলাদেশ আ-লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সমর্থন পেয়ে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন।

এরপর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। দুদু এমপি'র সমর্থন পেয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী হাসানুজ্জামান মিঠুর নিবার্চনী প্রচারণায় তার পক্ষে দাঁড়িয়ে যান জেলা আ-লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদ হোসেন হিমু,সদস্য নন্দলাল পার্শী,শেখর চন্দ্র মজুমদার, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক রজমান আলী,দোগাছী ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আলম সুমন,ভাদসা ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন,আমদই ইউপি চেয়ারম্যান শাহানুর আলম সাবু, মোহাম্মদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান,ধলাহার ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন সহ দুদু এমপির অনুসারীরা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাচনে আ-লীগের ৩ এবং যুবলীগের ১ নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে জয়পুরহাট-১ আসনের দুদুর সমর্থন পেয়েছেন হাসানুজ্জামান মিঠু। আর জয়পুরহাট-২ আসনের স্বপনের সমর্থন পেয়েছেন এ ই এম মাসুদ রেজা। এ ছাড়া জেলা আ-লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডলের সমর্থন পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন। এতে দলটির নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ায় দেখা দিয়েছে বিভক্তি।

স্বপন এমপির সমর্থন পাওয়া এ ই এম মাসুদ রেজার আনারস প্রতীকের পক্ষে দাঁড়িয়ে যান জেলা আ-লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা আ-লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম,কালাই উপজেলা আ-লীগের সভাপতি ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান,আক্কেলপুর উপজেলা আ-লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির এপ্লব, জয়পুরহাট পৌর আ-লীগের সভাপতি ইকবাল হোসেন সাবু, সাধারণ সম্পাদক কালীচরণ আগরওয়ালা, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিলন দেওয়ান, সদরের পুরানাপৈল ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সৈকত সহ স্বপন এমপির অনুসারীরা।

এদিকে এ দুজনের বিপরীতে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন উপজেলা আ-লীগের সভাপতি ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। তিনি জেলা আ-লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডলের সমর্থন পেয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে তার পক্ষে এককট্টা হয়েছেন সদর উপজেলা আ-লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোয়াজ্জেম হোসেন, জেলা আ-লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মন্ডল, শ্রম সম্পাদক আব্দুস সোবহান, উপ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, সদস্য হাদু আল মামুন চপল, আরিফ হোসেন লিটন, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার আলী সহ জাকির হোসেনের অনুসারীরা।এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রবীণ আ-লীগ নেতাকর্মীরাও আনোয়ার হোসেনের পক্ষে নেমেছেন।

এতে করে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এখন দুই এমপি ও জেলা আ-লীগের এক নেতার মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনী এক জনসভায় বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন,আমি এ ধরনের নির্বাচন কোনো দিন করিনি,এটিই প্রথম। তবে অনেকের নির্বাচন করে দিয়েছি।আর জয়পুরহাট-১ আসনের এমপি দুদু ভাই তার প্রার্থী দিয়েছেন হাসানুজ্জামান মিঠুকে।অপরদিকে আমার বড় ভাই স্বপন সাহেব (আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি) ঢাকা থেকে বসে মাসুদ রেজাকে সমর্থন দিয়েছেন। এখন জনগণ কাকে বেছে নেবেন সেটি জনগণের ইচ্ছা।এমপিদের প্রার্থীকে,না আমাকে? যদি মানুষ শান্তি চায় তবে আমাকে বেছে নিতে হবে। আর যদি সন্ত্রাস চাই ওই দুই প্রার্থীকে বেছে নিতে হবে বলে এমপি'র প্রার্থী হওয়ায় তাদেরকে কুমির ও হাঙ্গরের সাথে তুলনা করেছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাট-১ আসনের সাংসদ  সামছুল আলম দুদু বলেন, আমি কাউকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে পারি না। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ডেকে এ বিষয়ে নিষেধ করেছেন।নির্বাচনী প্রচার-প্রচরনায় আপনার প্রার্থী বলা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসানুজ্জামান মিঠু আমার সাথে রাজনীতি করে, এতটুকুই। কিন্তু আমি কারও কাছে ভোট চাইতে পারব না।আমি আছি ঢাকায়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আ-লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ  (জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ এর মোবাইলে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

এই ৩ জন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়া জেলা যুবলীগের সদস্য খাজা আল আমীন সোহাগ দোয়াত কলম প্রতীক ও জেলা গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম মাসুম কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

এমএস


 

Wordbridge School
Link copied!