ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতের কলকাতায় খুন হওয়ার খবর পাওয়ার পর তার নির্বাচনি এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বুধবার (২২ মে) সকালে কালীগঞ্জ শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সংসদ সদস্যের বসতবাড়ির সামনে ভিড় করেন শত শত নেতাকর্মী। বাড়িতে তার পরিবারের সদস্যরা না থাকলেও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ।
শোকাহত নেতাকর্মী-স্বজনরা অপেক্ষা করছেন মরদেহ উদ্ধারের ও ভারত থেকে দেশে ফেরত আসার। তারা বিভিন্ন সংবাদপত্রসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঢুঁ মারছেন সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ খবর জানতে।
নেতাকর্মীরা সংসদ সদস্য আনারের হত্যা রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
দুই মেয়ের বাবা আনোয়ারুল আজীম আনার নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাড়িতে স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। বড় মেয়ে ঢাকায় থাকতেন।
চারতলা বাড়িটির নিচতলা অফিস ও গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বসবাসের কক্ষ। চতুর্থ তলায় রান্নাঘর।
বুধবার (২২ মে) সকালে আনোয়ারুল আজীমের একান্ত সচিব আব্দুর রউফ বলেন, সংসদ সদস্যের বিষয়ে সব খবর মিডিয়া মারফত জানতে পেরেছি। ভারত থেকে বা প্রশাসনের কেউ আমাদের নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি।
সকালে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সংসদ সদস্যের বাড়ির সামনে কথা হয় স্থানীয় ভ্যানচালক আব্দুল কাদেরের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এমপি সাহেব ভালো মানুষ ছিলেন, সবার খোঁজখবর নিতেন। মোটরসাইকেল নিয়ে মাঠ-ঘাট চষে বেড়াতেন। এলাকায় অনেক রাস্তাঘাট করেছেন। তার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী নজিবুল ইসলাম বলেন, সংসদ সদস্যের এমন মৃত্যু কালীগঞ্জবাসীর জন্য খুবই দুঃখের। তার মৃত্যুতে কালীগঞ্জবাসী শোকাহত।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল করিম মিন্টু বলেন, শনিবার আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ছিল, সেই সভায় সংসদ সদস্যের যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে ফোনে না পেয়ে জানতে পারি তিনি ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। পরে তার মৃত্যুর খবর পাই।
তার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছি না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও জানান, সংসদ সদস্যর মরদেহ ফেরত আসার অপেক্ষা করছেন। তার জানাজার পর ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঠিক করা হবে।
ঝিনাইদহ-৪ (সদর-কালীগঞ্জ) আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। গত ১১ মে তিনি দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান।
কলকাতায় পৌঁছে তিনি ওঠেন তার বন্ধু, বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। কিন্তু ১৬ মে থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছিল না তার পরিবার।
আনার নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। সেখানে বলা হয়, ১৩ মে দুপুরে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি আনার। তবে তা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে আসা এক বার্তায় বলা হয়, দিল্লি যাচ্ছেন তিনি।
এদিকে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন পরে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বাবার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান।
পরের কয়েক দিনে দুই দেশের পুলিশের মধ্যে যোগাযোগের পর বুধবার সকালে কলকাতার সংবাদমাধ্যমে আনারের খুন হওয়ার খবর আসে। বলা হয়, নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন নামের বিলাসবহুল একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে পাওয়া গেছে বাংলাদেশের এ সংসদ সদস্যের লাশ।
পরে দুপুরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার একটি বাসায় ‘পরিকল্পিতভাবে খুন’ করা হয়েছে। ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে দেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন,কলকাতার বিধাননগরের যে বাসায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে গিয়ে কলকাতার পুলিশ মরদেহ পায়নি।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের বরাতে এ তথ্য দেন তিনি।
এমটিআই