দুর্গাপুর: নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে ঘরের ভেতর আটকে রেখে মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে জ্বলন্ত কয়েলের আগুন দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁকা ও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ভুক্তভোগী ওই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর নাম মিনা আক্তার (২৩)। তিনি দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ভাদুয়া গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত স্বামী ইব্রাহীম মিয়া (২৮) পার্শ্ববর্তী ধোবাউড়া উপজেলার বহরভিটা গ্রামের বাসিন্দা।
মিনা আক্তারের স্বজনরা জানান, মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছিল মিনা। ভাদুয়া গ্রামের জামে মসজিদে ইমামতি করতেন ইব্রাহীম মিয়া। মসজিদের কাছাকাছি মিনার বাড়ি হওয়ায় প্রায় সময়ই নানা অজুহাতে তাদের বাড়িতে আসতো ইব্রাহীম। একপর্যায়ে মিনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। প্রেমের সম্পর্ক এলাকায় জানাজানি হলে উভয়পক্ষের সম্মতিতে দেড় বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা।
ভুক্তভোগী মিনা আক্তার জানান, বিয়ের পর তাকে নিয়ে কুমিল্লা চলে যান ইব্রাহীম। সেখানে গিয়ে ৬ দিনের মাথায় তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অপারগতার এক পর্যায়ে নরসিংদীতে গার্মেন্টসে চাকরি নেন মিনা আক্তার। ওই সময় মিনার গর্ভে সন্তান আসায় ওই চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। চাকরি ছেড়ে দেওয়াই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় মিনার। এরপর থেকে তার ওপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।
তিনি আরও জানান, গত ১০ মে সকালে ঘরে আটকে রেখে মিনার দুই হাত ও পা বেঁধে, মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে মারধর ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জ্বলন্ত কয়েলের আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দেন ইব্রাহিম। পরে ১৭ মে শুক্রবার ইব্রাহিমের অগোচরে এক প্রতিবেশীর সহযোগিতায় নরসিংদী থেকে পালিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ভাদুয়া বাবার বাড়িতে চলে আসেন মিনা। গতকাল বুধবার তার পরিবারের লোকজন তাকে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
মিনা আরও বলেন, ‘আমার গর্ভে সন্তান আসায় কাজ ছেড়ে দেই আমি। এরপর থেকেই আমার ওপর চরম নির্যাতন শুরু হয়। আমাকে মেরে ফেলার কথাও বলেছেন তিনি। এই কথা শুনে আমি বাঁচতে পালিয়ে আসি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্বামী ইব্রাহিম মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোসাম্মৎ জেবুন্নেসা বলেন, ‘ওই নারী দুইদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের ক্ষত আছে। বর্তমানে মিনা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।’
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএস