সিলেট: সিলেটে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে আটটিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ভয়াবহ গোয়াইনঘাট উপজেলার অবস্থা। এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।
শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত সিলেটে পানিবন্দি ও আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা লোকজনের সংখ্যা বেড়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান স্বাক্ষরিত বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেটের আট উপজেলায় পানিবন্দি হয়েছেন ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ জন মানুষ।
জেলার ১৩টি উপজেলায় বন্যা প্রস্তুতি হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৫৪৭টি। বন্যা কবলিত আট উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৭৩৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি এলাকায় টানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়। ফলে সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেয় সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায়।
শুক্রবার নতুন করে প্লাবিত হয় সিলেট সদর উপজেলা। তবে এদিন সিলেটের বেশ কয়েকটি উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা সিলেট শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ৯২ সেন্টিমিটার। “কুশিয়ারা জকিগঞ্জ পয়েন্টে বিদৎসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেটের অন্য নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যায় সবচেয়ে বেশি পানিবন্দি হয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নই বন্যা কবলিত হয়েছে। আর ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজার ২৪২ জন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়েছেন ৯৩ হাজার মানুষ। উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৭৩ জন মানুষ। কানাইঘাট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে নয়টি প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন ৮০ হাজার ৬০০ মানুষ। ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজার ৪৭৬ জন।
জৈন্তাপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে ৬৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। এ উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪৮টি। সেখানে ৬৭৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জকিগঞ্জ উপজেলায় নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটি প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ জন। উপজেলার ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন ১৯৮ জন।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিম বলছিলেন, তার উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি হয়নি: আগের মতই আছে। “উপজেলার আয়শ্র কেন্দ্রগুলোতে আসা মানুষজনকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া খাদ্য সহায়তা চলমান রয়েছে।”
এআর