বরগুনা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বরগুনায় কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৭৪ কোটি টাকারও বেশি। পায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস হয়েছে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ স্হায়ী ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে। প্রচন্ড বাতাসের গতিতে ধুমড়ে মুচড়ে গেছে নষ্ট হয়ে গেছে জেলার কৃষি পণ্য।
সর্বনাশা রেমালের প্রভাবে বেশি ধ্বংস হয়েছে শত শত পানের বরজ। এতে কর্মহীন হয়েছেন সাড়ে তিন হাজার চাষি। তবে এসব পান চাষিদের জন্য কোনো প্রকল্প না থাকায় সহযোগিতার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, এবছর বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় পান চাষ হয়েছে ৩৬৮ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ১৮৪ হেক্টর জমির পানের বরজ। এতে পান উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে ৭৩৬ মেট্রিকটন, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
তথ্যসূত্র মতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জেলার অন্যান্য ফসলের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ১ হাজার ৭৯৬, আউশ বীজতলা ১ হাজার ৭৬, রোপা আউশ ১৩ হাজার ৬৬, মরিচ ২৬৫, হলুদ ২৬, কলা ৩৫, পেপে সাড়ে ৩৩ ও আম চাষে ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৭ হেক্টর জমি। মোট ৪ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে ৪৮ হাজার ৫৭২ মেট্রিকটন ফসল, যার আর্থিক মূল্য ১৭৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তবে এসব চাষিদের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা পেলেও পান চাষিদের জন্য নেই কোনো ধরনের প্রকল্প। এতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পানের জন্য সরাসরি কোনো সহযোগিতাই পাবেননা এ অঞ্চলের পান চাষিরা।
সরেজমিনে ঘুরে বরগুনা সদর উপজেলার ৮ নং সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ হেউলিবুনিয়া গ্রামে পানের চাষ তুলুনা মূলক বেশি শাষ হয়। সেখানে দেখা যায়, গত ২৬ মে থেকে শুরু হয়ে ২৭ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে অসংখ্য পানের বরজ সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাটকাঠি দিয়ে তৈরি এসব পান বরজের অনেক বরজই তীব্র ঝড়ো হাওয়ায় ভেঙে গিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
পান চাষি মোঃ টিপু সুলতান বলেন, আমাদের এলাকায় অসংখ্য পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে। আমার তিনটি বরজের মধ্যে দুইটিই একদম মাটির সাথে মিশে গেছে। আমার লেনদেন ভালো থাকায় তিনটি ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছি। এতদিন ব্যাংকের ঋণ ঠিকভাবেই পরিশোধ করেছি, কিন্তু এখন কি হবে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। বরজ দুটি ঠিক করতে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হবে এ টাকা আমি এখন কোথায় পাব। অনেকেই এসে দেখে যায়, আমালল্লকে ভেঙে না পড়তে সাহস দেয় কিন্তু টাকার সাহসতো কেউই দেয়না।
একই এলাকার পান চাষি বাদল হাওলাদারের একটি পানের বরজ ভেঙে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল তিনদিন পর্যন্ত চলছে। প্রথমদিন বাড়িতেই ছিলাম। পরে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়লে আমরা সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেই। বাতাসের তীব্রতা বেশি থাকায় পানের বরজ ভেঙে গেছে। এতে যে ক্ষতি হয়েছে তা আমার পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সম্ভবনা না। যদি কেউ আমাদেরকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে তাহলে আবারও আমি পানের বরজ দাঁড় করতে পারব।
ঝড়ের সময় গাছ পড়ে ভেঙে যাওয়া একটি পানের বরজের মালিক বিধবা নারী মিনারা বেগম বলেন, আমার একটি বরোজে ঝড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি গাছ পড়েছে। এতে পানের বরজটি মাটির সাথে মিশে গেছে। আমি একা মহিলা মানুষ ওই একটা পানের বরজ দিয়েই সংসার চালাতাম, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতাম। আমার ওই একটাই সম্পদ ছিল, এখন আমার চলারমত আর কোনো পথ নেই।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আবু সৈয়দ মোঃ জোবায়দুল আলম বলেন, বরগুনায় প্রায় ৪০০ হেক্টরের অধিক জমিতে পানের চাষ হয়। আমাদের মাঠ পর্যায়ের হিসেব অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পান চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে পান চাষিদের প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হলেও আমাদের দপ্তরে পানের উপরে কোনো প্রকল্প না থাকায় তাদেরকে সরাসরি সাহায্য সহযোগিতা করার সুযোগ কম। তবে আমরা সরকারি প্রণোদনা পেলে ক্ষতিগ্রস্থ পান চাষিদের কৃষক হিসেবে সহায়তা করতে পারি। এছাড়া সরাসরি পান চাষি হিসেবে তাদেরকে কোনো সহায়তার সুযোগ নেই।
এসআই