টাঙ্গাইল: কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার ভোজদত্ত ও বীরবাসিন্দা ঈদগাহে দীর্ঘ এক যুগ ধরে ১৪৪ ধারা চলে আসছিল। যার কারণে ২০০ বছরের এ মাঠে এতদিন ঈদের নামাজ পড়তে পারছিলেন না ভোজদত্ত ও বীরবাসিন্দাসহ আশেপাশের সাত গ্রামের মানুষ।
অবশেষে সেই বিরোধের অবসান ঘটিয়ে সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন ওই ৭ গ্রামের মানুষ। এর আগে গত ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের নামাজও আদায় করা হয়।
প্রশাসন ও স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় ভোজদত্ত গ্রাম ও কালিহাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী বীরবাসিন্দা গ্রামের অবস্থান। ঈদগাহ মাঠের আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় ২০১২ সালে। ওই বিরোধ মেটাতে দুই উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপস্থিতিতে ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর মীমাংসা বৈঠক বসেন।
বৈঠক শেষে উপস্থিত দুই গ্রামের বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ওই সংঘর্ষে বীরবাসিন্দা গ্রামের আব্দুল গফুর নামে এক ব্যক্তি খুন হন। সেই কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ওই মাঠে ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর ঈদুল আজহার দিন থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। যা দীর্ঘ এক যুগ ধরে চলমান ছিল।
স্থানীয়রা জানান, গত ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে মাঠে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, জেলা প্রশাসক কায়সারুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারের মধ্যস্থতায় দুই গ্রামের মধ্যে মীমাংসা বৈঠক হয়।
যা পরে জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবগত করেন স্থানীয়রা। যার কারণে এ বছর ঈদুল ফিতরে প্রশাসন ওই মাঠে ১৪৪ ধারা জারি থেকে বিরত থাকে। ফলে দীর্ঘ একযুগ পর বিরোধীয় দুই গ্রামসহ আশেপাশের ৭ গ্রামের মানুষ সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন।
গফুরের ছেলে বীরবাসিন্দা গ্রামের মোস্তফা জানান, দীর্ঘ ১২ বছর পর সব ভেদাভেদ ভুলে মাঠে নামাজ পড়তে পেরে ঈদগাহ মাঠের আওতাভুক্ত ৭ গ্রামের মানুষের সঙ্গে আমিও আনন্দিত।
ঈদগাহ মাঠের ইমাম মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। সব ভেদাভেদ ভুলে এ এলাকার মানুষ একমত হয়ে ১২ বছর পর একসঙ্গে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে ইসলামের সেই শান্তি সৌহার্দের বার্তাই দিয়েছে।’
উপজেলা বীরবাসিন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছোহরাব আলী জানান, কুরবানির ঈদ উপলক্ষে এলাকার মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে নামাজ আদায় করেছেন। এরকম একটি মহৎ উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গ্রামবাসীরা নিজের খুশিতে আত্মহারা।
আইএ