• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

অপহরণের শিকার চার শ্রমিক দেশে ফিরে জানালেন নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা  


লালমনিরহাট প্রতিনিধি জুন ১৯, ২০২৪, ১১:৫২ এএম
অপহরণের শিকার চার শ্রমিক দেশে ফিরে জানালেন নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা  

ফাইল ছবি

লালমনিরহাট: লিবিয়ায় অপহরণের শিকার লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের চার শ্রমিক দেশে ফিরে শোনালেন জিম্মি দশায় থেকে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা। এদের মধ্যে একজন আহত অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর বাকি ৩জন ঈদের দিন তাদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছেন।

এদিকে তাদের বাড়ি ফেরার খবর শোনা মাত্র একনজর দেখতে ছুটে আসছেন প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন। 

জানা গেছে, লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের লিবিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমানের মাধ্যমে লিবিয়ায় ওই চার যুবক অপহরণ হয়। এরপর তাদের মারধর করা ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে বাংলাদেশি দুটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে দাবি করা হয় পাঁচ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ। কিন্তু এসব শ্রমিকদের পরিবার অভাবী হওয়ায় টাকা দিতে পারেনি। টাকা না পাওয়ায় তাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে অপহরণকারীরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

পরে খবর পেয়ে লিবিয়ার সেনা সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন এবং সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে চার বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠান। দেশে ফিরে তারা অপহরণের ও নির্যাতনের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন।

লিবিয়ায় জিম্মি হওয়া লালমনিরহাট পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নপর আল-আমিন মিয়া (২৩) জানান, “গেলো রমজানের আগেরদিন (১১ মার্চ) গভীর রাতে ঘরের দরজা খোলার জন্য ডাক দেয়া হয় তাদের। এ সময় তিনি দরজা খোলা মাত্র দুজন ব্যক্তি এসে মাথায় পিস্তল ধরে। এরপর ঘরের ভেতরে থাকা মোবাইল, ল্যাপটপ ও টাকা নিয়ে নেন তারা। পরে লাইন করে দাঁড় করিয়ে সবাইকে একটি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িতে উঠার সময় আল-আমিন মিয়া দেখেন অপহরণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের এলাকার লিবিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমান। এসময় আল-আমিন মিজানের নাম ধরে ডাক দিলে পেছন দিক থেকে বন্দুক দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। পরে কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে দুহাত বাঁধা হয় তার।”

অপহরণের শিকার লালমনিরহাটের একই এলাকার লিবিয়া প্রবাসী রাকিবুল ইসলাম (২৪) জানান, “তাদেরকে অপহরণের পর নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশি দুটি বিকাশ নম্বর দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। সময় মতো টাকা না পেয়ে শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। প্রায় একমাস তাদের একটি দূর্গন্ধযুক্ত ঘরে আটকে রাখা হয়। প্রতিদিন এসে তাদের শারীরিক নির্যাতন করা হতো। কখনো কিল ঘুষি মারতো, আবার কখনো লাঠি দিয়ে বেধরক পেটাতো। মেরে ফেলার ভয় দেখাতো। পেটভরে খেতেও দিতো না। এক পর্যায়ে লিবিয়ার সেনা সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করেন। এরপর লিবিয়ার একটি কারাগারে ৭৫ দিন তাদেরকে রাখা হয়। পরে আরও একটি কারাগারে ১৭ দিন রেখে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।” 

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার আল আমিন (২২) বলেন, ‘অপহরণের পর কথায় কথায় একটি পাইপ দিয়ে আমাদের পায়ের তালুতে মারা হতো। আমাদেরকে ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি আর বিদেশ যেতে চাই না। দেশেই কিছু করে বাঁচতে চাই।’

তাদের অভিভাবকরা জানান, সন্তানদের ফিরে পাবেন কখনো ভাবতেই পারেননি তারা। আর যখন ফিরে পেয়েছেন, তখন আর কখনোই পাঠাবেন না বিদেশে। প্রয়োজনে দেশে দিনমজুরি করবে, তবু বিদেশে আর নয়।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) লালমনিরহাট জেলা শাখার সহ-সভাপতি সুপেন্দ্র নাথ দত্ত বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশ যাওয়ায় অনেক বাংলাদেশি বিদেশে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েন। তাই কর্মসংস্থানের জন্য কেউ বিদেশ গেলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া উচিত।
 
এসএ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!