• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পাহাড়ি ঢলে ফুঁসছে কুড়িগ্রামের নদ-নদী, বন্যার শঙ্কা


জাহাঙ্গীর আলম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: জুন ১৯, ২০২৪, ০১:২৪ পিএম
পাহাড়ি ঢলে ফুঁসছে কুড়িগ্রামের নদ-নদী, বন্যার শঙ্কা

কুড়িগ্রাম: ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে ফুঁসছে কুড়িগ্রামের প্রধান প্রধান নদ-নদী। বাড়ছে পানি। ইতোমধ্যে তিস্তা ও দুধকুমার বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। অন্যান্য নদ-নদীও বিপদসীমার দিকে ছুটছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এদিকে দিকে পানি বৃদ্ধির সাথে রাজারহাট উপজেলার তিস্তা অববাহিকার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পাউবো কোনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোর অনেকে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙনের হুমকিতে আছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্থানীয় বাজারসহ অন্তত শতাধিক পরিবার।

পাউবো, কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকাল ৬টা থেকে গতকাল বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম (ধরলা ব্রিজ) পয়েন্টে ৪৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ক্রমশ বিপৎসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে এর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ভূরুঙ্গামারীর নদ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ও বামনডাঙা ইউনিয়নের বেশকিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘরের চারপাশে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে ওইসব এলাকার সবজি ক্ষেত।

রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ফান্দেরচর গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল বলেন, দুধকুমারের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বাড়িঘরে পানি প্রবেশ না করলেও চারপাশে পানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে বাড়িঘরে প্রবেশ করবে। ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার চোখ রাঙ্গানির সাথে তিস্তা তীরে শুরু হয়েছে ভাঙন। রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় তিস্তার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাড় ভেঙ্গে একের পর এক বসতভিটা আর আবাদি জমি নিজের গর্ভে নিয়ে নিচ্ছে আগ্রাসী এই নদী। ভাঙনের কিনারে নিরুপায় দিন যাপন করছেন অনেক দিনমজুর পরিবার। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বেন বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সেফারুল ইসলাম জানান, ভাঙনের কবলে পড়ে বসতি সরিয়ে নিয়েছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। ভাঙন হুমকিতে আছে কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সোনার জুম্মা এলাকা থেকে মৌলভী পাড়া পর্যন্ত তীরবর্তী শতাধিক পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। 

ফুলবাড়ী উপজেলার রওশন শিমুলবাড়িতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে  আড়াইশত পরিবার ও নওডাঙ্গা ইউনিয়নে চরগোরক মন্ডল এলাকায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে কয়েকটি পরিবার। সেই সঙ্গে ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে কুটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লা।

বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পাউবো, কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, নদনদীর পানি বাড়ছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দুধকুমার, তিস্তা এবং ধরলা নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রত বৃদ্ধি পেতে পারে। কয়েকটি  স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করে সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা প্রৌছানো রয়েছে। দুর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।

আইএ

Wordbridge School
Link copied!