সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। বুধবার পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নতুন করে বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠায় বন্দি হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার তিন লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। রান্নাঘর ও শৌচাগার ডুবে যাওয়ায় চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্যার্ত এলাকার নারী-শিশুসহ পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা।
বন্যায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় এসব এলাকায় ত্রাণের জন্য বানভাসিদের মধ্যে চলছে হাহাকার। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলো অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও কিছু ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হলেও গ্রামে ত্রাণ নিয়ে কেউ যাচ্ছেন না। গ্রামের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের খোঁজ নেয়নি কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এখানকার অনেক রাস্তাঘাট। প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মৎস্য খামার। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এখানে সুরমা, চেলা ও বটের নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৮০ মিমি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১০.৬৬ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিন দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
বানভাসিরা জানিয়েছেন, যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ২০২২ সালের বন্যার ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ মুহূর্তে বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। শুকনো খাবার ও ত্রাণ সহায়তা প্রার্থনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন।
গ্রামীণ সড়ক বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ১৮টি সড়ক ও উপজেলা সদরের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ছাতক-সিলেট সড়ক। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কপথে ঝুঁকি নিয়ে কিছু কিছু যান চলাচল করলেও গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে ছাতকের সঙ্গে জেলা সদরসহ দেশের সব অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
একাধিক স্টোন ক্রাসার মিল, পোলট্রি ফার্ম ও মৎস্য খামারে বন্যার পানি ঢুকে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। শাকসবজির বাগানেও পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
এ ছাড়া ইসলামপুর ইউনিয়নের রতনপুর, নিজগাঁও, গাংপাড়, নোয়াকোট, বৈশাকান্দি, বাহাদুরপুর, ছৈদাবাদ, হাদাচানপুর,রহমতপুর, দারোগাখালীসহ অন্যান্য গ্রাম, পৌরসভার হাসপাতাল রোড, শাহজালাল আবাসিক এলাকা, শ্যামপাড়া, মোগলপাড়া তাতিকোনা বৌলা, লেবারপাড়া নোয়ারাই ইউনিয়নের বারকাহন, বাতিরকান্দি, চরভাড়া,কাড়লগাঁও, লক্ষ্মীভাউর, চাঁনপুর, মানিকপুর, গোদাবাড়ী, কচুদাইড়, রংপুর, ছাতক সদর ইউনিয়নের বড়বাড়ী, ছাতক দুহালির পাকা সড়ক আন্ধারীগাঁও নামক স্থানে ভেঙে যাওয়ার ফলে দুটি ইউপির উত্তর খুরমা ও চরমহল্লা ইউপির প্রতিটি ঘরে ঘরে পানি প্রবেশ করছে। মাছুখালী, তিররাই, মুক্তিরগাঁও, উত্তর খুরমা ইউনিয়নের আলমপুর, দাহারগাঁও, ঘিলাছড়া, মৈশাপুর, তকিরাই, তেরাপুর মোহনপুর, আমেরতল, ঘাটপার, গদালমহল, রুক্কা, ছোটবিহাই, এলঙ্গি, রসুলপুর, শৌলা, চরমহল্লা ইউনিয়নের ভল্লবপুর, চুনারুচর, চরচৌলাই, হাসারুচর, প্রথমাচর, সিদ্ধারচর, চরভাড়ুকা দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের দড়ারপাড়, ভুইগাঁও, শেওলাপাড়া, হরিশরণ, হাতধনালী, রাউতপুর, ধনপুর, চৌকা, রামচন্দ্রপুর, হলদিউরা কালারুকা ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর, উজিরপুর, রামপুর, মালিপুর, দিঘলবন, সিকন্দরপুর, আরতানপুর, রংপুর, মুক্তিরগাঁও, ভাতগাঁও ইউনিয়নের জালিয়া, ঘাঘলাজুর, হায়দরপুর, বাদে ঝিগলী, সিংচাপইড় ইউনিয়নের পুরান সিংচাপইড়, আসলমপুর, গহরপুর, মহদী, সৈদরগাঁও, সিরাজগঞ্জ বাজার, সরিষাপাড়া, হবিপুর, মামদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মোস্তফা মুন্না জানান, ইতোমধ্যে বন্যাদুর্গতদের আশ্রয়ের ৬৭টি বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
আইএ