সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতা, আর সেই শত্রুতার জেরে দুটি গ্রুপের ভয়াবহ সংঘর্ষে এক কিশোরসহ ঝরল ৩টি তাজা প্রাণ। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ৩৮ জন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে ৩টি খুনের একটি ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় চাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে এখনো অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গ্রামে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
সর্বশেষ বুধবার (১৯ জুন) রাতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফলাবিদ্ধ ফরহাদ হোসেন (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। ফরহাদ উপজেলার গালা ইউনিয়নের চর বর্ণিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
অপর নিহতরা হলেন- একই গ্রামের খোদাবক্সের ছেলে সানোয়ার হোসনে (৩৫) ও আব্দুস সোবহানের ছেলে তামিম হাসান গালিব।
এর আগে ঈদের পর দিন মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে উপজেলার গালা ইউনিয়নের চর বর্ণিয়া গ্রামে সায়েম ও আখের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে সানোয়ার হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চর বর্ণিয়া গ্রামে সরকারি বাঁধের জায়গা দখল নিয়ে সায়েম ও আখের গ্রুপের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে মঙ্গলবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা। টেঁটা, ফলা ও বর্শাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সংঘর্ষ। এতে উভয়পক্ষের ৪০ জনেরও বেশি লোক আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ওইদিনই টেঁটাবিদ্ধ হয়ে মারা যান সায়েম গ্রুপের সদস্য সানোয়ার হোসেন মোল্লা। পর দিন ভোরে একই গ্রুপের কিশোর সদস্য তামিম হাসান গালিব ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। রাতে আখের গ্রুপের সদস্য ফলাবিদ্ধ ফরহাদ হোসেন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সংঘর্ষের ঘটনায় সায়েম গ্রুপের দুজন ও আখের গ্রুপের একজন নিহত হয়েছেন।
এদিকে সানোয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় তার মা আনতিরি বেগম বাদী হয়ে ১২৫ জন আসামির নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে তামিম হাসান গালিব ও ফরহাদ হত্যার ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ এজাহার দায়ের করেনি।
শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ফরহাদ হোসেন। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ এলাকায় আনে স্বজনরা। পরে থানায় এনে মরদেহ দেখিয়ে নিয়ে দাফন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কৃষক সানোয়ার হোসেন নিহতের ঘটনায় তার মা আনতিরি বেগম বাদী হয়ে গত বুধবার সকালে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে বাকি দুটি হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত করার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একটি ঘটনায় মামলা হলেও বাকি ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ এজাহার দিতে আসেনি। তবে পুলিশ তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এজাহার পাওয়ার পর দ্রুত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সানোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।’
আইএ