বরিশাল: বরিশাল নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় বেড়েছে আত্মহত্যার ঘটনা। গত এক সপ্তাহে নগরীসহ জেলায় ৬ জন আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে আরো ২জন। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিমান করে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষ যখন কারো কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা খুঁজে পায়না তখনই আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে সামাজিকভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা কিংবা আত্মহত্যার চেষ্টা একটি অপরাধ। কাউকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা ও অভিযুক্ত শাস্তির আওতায় আনলে কিছুটা কমে যেত বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
দেশের ফৌজদারী দন্ডবিধির ৩০৬ ধারায় কাউকে আত্মহত্যার প্ররোচনা কিংবা সহায়তা করার অপরাধে অভিযুক্তের ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টাকারীকে ৩০৯ ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়ার বিধান। কিন্তু পরিবার কিংবা সংশ্লিষ্টরা এই আইন ইচ্ছে করে কিংবা মানবিক কারন দেখিয়ে এড়িয়ে যায়। যার কারনে আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে।
শুক্রবার (২৮ জুন) রাতে মুলাদী উপজেলায় মায়ের সাথে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে স্কুলছাত্রী সুমাইয়া। উপজেলার ডিক্রীরচর গ্রামের মনিরুজ্জামান টিয়া বেপারীর মেয়ে এবং দক্ষিণ কাজিরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া রাতে পাশের বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে যায়। এ নিয়ে তাকে গালমন্দ করে মা। এতে অভিমান করে আত্মহত্যা করে সে।
একই উপজেলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় মানসিক ভারসাম্যহীন নুরুন্নবী হাওলাদারের (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নান হাওলাদারের ছেলে সে। উজিরপুর উপজেলায় সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় তিনজন আত্মহত্যা করে। পারিবারিক কলহের জেরে সোমবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে উপজেলার উত্তর শোলক ৭ নং ওয়ার্ডের মোঃ সেলিম হাওলাদারের ছেলে মোঃ শাওন (১২) কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বাহেরঘাট গ্রামের ৮ নং ওয়ার্ডের মৃত তাহের হাওলাদারের ছেলে আব্দুল মন্নান হাওলাদার (৪০) ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে পীরের পাড় ৭ নং ওয়ার্ডের মৃত রমণী সমদ্দারের স্ত্রী ক্যান্সারের রোগী সুখদা সমদ্দার (৬৫) বাড়ির পিছনের আম গাছের সাথে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে।
অসুখ ও অভাবের তাড়নায় নগরীর মনসাবাড়ির গলির বাসিন্দা খোকন মন্ডল আত্মহত্যা করেছে। দুই সন্তানের জনক খোকন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। স্ত্রী গৃহপরিচারিকার কাজ করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর গ্রামের আলমগীর মিয়ার ছেলে ফেরদৌস মিয়া (২৫) পারিবারিক কলহের কারনে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে। পরে তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকালে উপজেলার কোদালধোয়া গ্রামের বিরাজ ঘরামীর মেয়ে মৌ ঘরামী (২৩) তার মায়ের সাথে ঝগড়া হলে অভিমান করে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে। তাকেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এর আগে নগরীর কাউনিয়ায় নিজ কন্যাকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে যুবক নাঈম হাওলাদার। তালাক দেয়া স্ত্রী ৫ বছর বয়সী কন্যা রাবেয়া বশরীকে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে নিজ সন্তানকে জবাই করে। একই বটি দিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করে নাঈম। এর দুই দুইদিন আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা লাইব্রেরীতে প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করে মেধাবী শিক্ষার্থী শেফা নূর ইবাদী।
আত্মহত্যা থেকে শিক্ষার্থীদের ফেরাতে কাউন্সিলিং ও গাইডেন্স সেন্টার খুলেও প্রতিরোধ করতে পারছেনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এসআই
আপনার মতামত লিখুন :