ঢাকা: ঝালকাঠির আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিভেনম না পেয়ে মো. সেলিম আকন (৬০) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ এন্টিভেনম থাকার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। এ অবস্থায় এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন অফিস।
শনিবার (২৯ জুন) ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঝালকাঠী জেলাধীন কাঠালিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘ডাক্তারের অবহেলায় বিষাক্ত সাপের কামড়ে সেলিম আকন নামক এক ব্যাক্তির মৃত্যু’ শীর্ষক সংবাদ বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনায় প্রকৃত তথ্য সরেজমিনে জরুরি ভিত্তিকে অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। একইসঙ্গে আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. শিউলী পারভীন (সভাপতি), ঝালকাঠি সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সিয়াম আহসান (সদস্য) ও ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান (সদস্য সচিব)।
এর আগে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় সাপের কামড়ে মো. সেলিম আকন (৬০) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার তালতলা বাজারের দোকানে তাকে সাপ কামড় দেয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে অ্যান্টিভেনম থাকা সত্ত্বেও তা না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। চিকিৎসকের অবহেলায় সেলিমের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা।
নিহতের পরিবার জানায়, শনিবার সকালে উপজেলার তালতলা বাজারের সেলিম আকনের মুদি দোকানে ঢুকে পড়ে একটি বিষধর সাপ। সাপটি তাঁর হাতে কামড় দেয়। এ সময় সেলিম নিজেই উপস্থিত লোকজনকে তাকে সাপে কামড় দিয়েছে বলে জানান। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলার আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
স্বজনদের অভিযোগ, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, তাদের কাছে অ্যান্টিভেনম রাখার স্টোররুমের চাবি নেই, তাই তারা চিকিৎসা দিতে পারছেন না। ঘণ্টাখানেক পর রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পথে সেলিমের মৃত্যু হয়। মৃত সেলিম আকন উপজেলার পূর্ব বাঁশবুনিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার আকনের ছেলে।
নিহত সেলিমের ভাইয়ের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন জসিম অভিযোগ করেন, সাপে কামড় দেওয়ার পর তারা রোগীকে নিয়ে আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তখন তাঁরা চাচাকে টেবিলের ওপর ফেলে রেখেছিল। জিজ্ঞেস করলে চিকিৎসকরা বলেন, রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে, আপনারা অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকরা জানান, বিষাক্ত সাপে কেটেছে, এখানে কোনো চিকিৎসা হবে না। রোগেকে বরিশালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
তাদের পরামর্শে অ্যাম্বুল্যান্সে বরিশাল যাওয়ার পথে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফোন করে ফিরে আসতে বলে। আবারও ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, দশটি ইনজেকশন একসঙ্গে পুশ করতে হবে, তাদের কাছে আছে আটটি। স্টোরের চাবি নাই, তাই ভ্যাকসিন পুশ করতে পারবেন না। তখন আবার বরিশালের উদ্দেশে রওনা হলে পথেই তার চাচা মারা যান।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার জানান, সাপে কামড়ানো রোগীকে ভ্যাকসিন পুশ করার জন্য রোগীর নিকটতম স্বজনের নিদাবিপত্রে স্বাক্ষর করার বিধান রয়েছে। সেলিমের পক্ষে কেউ স্বাক্ষর না করায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে এন্টিভেনম পুশ করতে পারেননি। স্বজনরাই আগ্রহী হয়ে তাকে বরিশাল নিয়ে গেছে।
এমএস