• ঢাকা
  • শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

সিরাজগঞ্জ‌ে লাম্পি স্কিনে এক মাসে অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জুলাই ৫, ২০২৪, ০৮:৫২ পিএম
সিরাজগঞ্জ‌ে লাম্পি স্কিনে এক মাসে অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছড়িয়ে পড়া লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হয়ে এক মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক গরু মারা গেছে। চিকিৎসা করেও গরু বাঁচাতে না পারায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারিরা। 

খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত চর্মরোগটি গ্রীষ্মের শেষ ও বর্ষার শুরুর দিকে বছরে দুবার ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত মশা, মাছি ও বিশেষ পোকার মাধ্যমে গরুর দেহে ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া সংক্রমিত গরুর সঙ্গে খাবার গ্রহণ করলেও এই রোগ ছড়াতে পারে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার তালম পদ্ম পাড়ায় করিম সুপারের ১টি, তালম গ্রামের সোরহাব হোসেনের ২টি, বকুলের ১টি, হাবিব মাষ্টারের ১টি, রবিউল করিমের ১টি, আলামিনের ১টি, মোতালেবর ১টি, সেলিম সরকারের ১টি, কালামের ১টি, নামা সিলেট গ্রামের তাহের উদ্দিনের ১টি, দিঘী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ২টি, সগুনা গ্রামের মাহবুর হোসেনর ১টি, চরকুশাবাড়ি গ্রামের লিটন আহমদের ১টি, ভাটার পাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ১টি, রহমত আলীর ১টি, খালকুলা গ্রামের সবের আলীর ১টি, তাড়াশ পৌর এলাকার কৃষক ইউনুস আলীর ১টি, সানোয়ার হোসেনের ১টি, দিঘুরিয়া গ্রামের আউয়াল হোসেনর ১টি, শিবপুর গ্রামের মহন আলীর ১টিসহ উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে কৃষক ও খামারিদের কমপক্ষে ৫০ টি গবাদি পশু গরু মারা গেছে। 

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকালের উপজেলার তালম ইউনিয়নের তালম পদ্ম পাড়া গ্রামের মাদ্রাসার সুপার মো. করিম হোসেনের বাড়ির উঠানে গিয়ে দেখা যায়, প্রচন্ড দুঃগন্ধ গোয়াল ঘড় থেকে বাড়ির চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ির অনেকে নাকে কাপড় দিয়ে সরে যাচ্ছেন দূরে। এরই মধ্যে গামছায় মুখ বেঁধে গোয়ালে ঢুকলেন দুজন কৃষক। তারপর একটি মরা গরুর চার পা রশিতে বাঁধা হলো। এরপর রশিতে বাঁধা গরুর পায়ের ভিতর দিয়ে লাম্বা কাঠ দিয়ে ওই দুই জন কৃষক কষ্ট করে কাঁধে নিয়ে রওনা হলেন। মুলতঃ লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া গরু মাটিতে পুঁতে রাখার জন্য কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাড়ি থেকে দূরে ফাঁকা স্থানে। 

স্থানীয়রা জানান, গত মাস খানেক ধরে প্রত্যন্ত গ্রামে কৃষক, খামারিদের গরুর লাম্পি স্কিনে আক্রান্তের হার বেড়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা জুড়ে। আর গত এক মাসে এ উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে কৃষক ও খামারিদের কমপক্ষে ৫০ টি গবাদি পশু গরু মারা গেছে। সেই সাথে আক্রান্ত আরো অনেক গরুর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং মারা যাওয়া গরুর বেশির ভাগই বাছুর।

তালম গ্রামের কৃষক সোরহাব আলী জানান, প্রথমে তার লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। খাবারের রুচি কমে আসে। এক সময় আক্রান্ত গরুর জ্বর বেশি হয়ে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হতে থাকে। এরপর গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় গুটি গুটি ক্ষত দেখা দেয়। সে ক্ষত কয়েক দিনে পঁচে গিয়ে তা থেকে দুঃগন্ধ ছড়ায়। পাশাপাশি গরুর দুই পায়ের মাঝে বুকের নিচে পানি জমে ঝুলে পড়ে। আর এ ভাবে আমার দুটি গরু লাম্পি স্কিন আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ওই দু গরুর চিকিৎসা করাতে দুই সপ্তাহে পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের ভিজিট ও দামী দামী ঔষধ কিনতে প্রায় ১২ হাজার টাকা ব্যয় করি। তারপরও আমার গরু দুটি বাঁচাতে পারিনি। 

দিঘী গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, ষাঁড় ও বাছুরসহ ছয়টি গরু আছে। এর মধ্যে দুটি গরুর এলএসডি রোগে সংক্রমিত হয়েছে। মশা ও মাছি থেকে বাঁচতে ২৪ ঘণ্টা মশারি টাঙিয়ে রাখতে হচ্ছে। এখন মোটামুটি সুস্থ হলেও গরুর চামড়ার ওপর গভীর ক্ষত হয়ে আছে।

এ দিকে তাড়াশ পৌর এলাকার কৃষক হাসান আলী, আব্দুল মাকেল, রেজাউল করিমসহ অনেকের অভিযোগ, তাড়াশ উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের উদাসীনতা ও গরু ছাগলসহ গবাদি পশুর অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে উপজেলা এলাকায় পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের দৌরাত্ম বেড়ে গেছে। তারা এখন লাম্পি স্কিনসহ গবাদি পশুর নানা রোগের চিকিৎসায় এন্টিবায়েটিক এবং রেজিষ্টার চিকিৎসক ছাড়া লেখা যায় না এমন ঔষধ লিখে ও নিজেই দিয়ে মোটা দাগে খরচ নিয়েও আক্রান্ত গরু বাঁচাতে পারছেন না। আর এ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বেশির ভাগ কৃষক ও খামারি। আর লাভবান হচ্ছেন পল্লী প্রাণি চিকিৎসক। 

অপরদিকে বেশির ভাগ লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গবাদি পশুর ভুক্তভোগি মালিক কৃষক এবং খামারিদের ভাষ্য, উপজেলা প্রাণি সম্পদ ভ্যাটেনারি হাসপাতালে গেলে গরুসহ অনান্য গবাদি পশুর তেমন চিকিৎসা পাই না। আবার পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের কাছে গেলে তারাও দু একটি ইনজেকশন আর এন্টিবায়েটিক ঔষধ দিয়ে প্রথম বারে হাজার বারো’শ টাকা বিল করেন। বলেন, চিকিৎসা করেন দেখা যাক কি হয়। এ ভাবে পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের কাছে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসায় ব্যয় মেটাতে দিশেহারা হয়ে পরছেন বলে জানান আরেক কৃষক ইসমাইল হোসেন। 

চৌড়া গ্রামের পল্লী প্রাণি চিকিৎসক মো. তাইজুল ইসলাম বলেন, লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত তালম গ্রামের নজরুল ইসলাম, কুসুম্বী গ্রামের কুশকার সরকার নামা সিলট গ্রামের রাজুর, বিনোদপুর গ্রামের রব্বানীরসহ আরো অনেক গ্রামের কৃষক ও খামারির লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চলছে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডা. অলিউল ইসলাম কয়েকটি গরু লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি সোনালী নিউজ‌কে বলেন, উপজেলা প্রাণি সম্পদ ভ্যাটেনারি হাসপাতালে থেকে লাম্পি স্কিনসহ নানা রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুর চিকিৎসায় আমরা আন্তরিক। এরই মধ্যে শত শত গরুকে লাম্পি স্কিনের প্রতিষেধক টিকাও দেওয়া হয়েছে। আর লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গবাদি পশু গরুর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ প্রতিষেধক টিকা কাজ করলেও ২০/২৫ ভাগ কাজ করবে না। পাশাপাশি পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের দৌরাত্ম বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার এখতিয়ার নাই। তাছাড়া পল্লী প্রাণি চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে এন্টিবায়েটিক লিখতে পারেন না বলেও জানান তিনি।

আইএ

Wordbridge School
Link copied!