• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

জামালপুরে কমছে পানি, সঙ্কট বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের


জামালপুর প্রতিনিধি জুলাই ৬, ২০২৪, ১১:৪১ এএম
জামালপুরে কমছে পানি, সঙ্কট বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের

জামালপুর : জামালপুরে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনও চারটি উপজেলার প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। নারী-শিশু ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বানভাসী মানুষ।

শুধু বসতঘর নয়, রান্না ঘর, টিউবওয়েল, শৌচাগার রাস্তাঘাট সবকিছুই তলিয়ে রয়েছে। ফলে রান্না করে খাওয়া ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বেশি বেশি শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খাদ্য সঙ্কট থাকবে না বলে জানিয়েছেন ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম।

ষাটোধ্র্ব খট্টু মন্ডল ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের পশ্চিম বলিয়াদহ নুরুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দার মেঝেতে বসে আছেন। তার কাছাকাছি যেতেই দাঁড়িয়ে পড়লেন। তার চার সদস্যের পরিবার। ঘরে বন্যার পানি ওঠেছে তাই এই স্কুলে এসে বসে আছেন। এ সময় তার সাথে বন্যা নিয়ে নানা কথা হয়।

কথার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘রান্না করে খাওয়ার মাটির চুলা তলিয়ে গেছে। শুকনা কয়টা খাবার খেয়ে এখানে আসছি। সারাদিন এখানে থাকবো, বিকালে বাড়িতে যাবো। ঘরের মধ্যে পানি, কই থাকবো। বসে থাকার তো কোনো উপায় নেই। ঘরে ও আঙিনায় পানি, থাকা তো যায় না।

তিনি আরও জানান, তার বাড়িতে তিনদিন আগে পানি ওঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) গোয়াল ঘরে পানি উঠেছে। সারা রাতে ঘরের মাটি সরে গিয়ে পানি উঠেছে। খাট-চৌকি জোড় করে রাখা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর পানি এক সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরিষাবাড়িতে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তার তথ্য মতে, জেলার চারটি উপজেলায় ২২ হাজার ৬৫ টি পরিবারের ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৯০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এগারটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজার ৮০১ জন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামপুর দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, বকশীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসহ সরকারি অফিসে পানি ঢুকে পড়েছে।

বন্যায় নারী-শিশু ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বানভাসী মানুষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় বসতঘরের পাশাপাশি রান্নার ঘর, টিউবওয়েল, শৌচগার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। রান্না করে খাওয়া খাবারের ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ সময় সরকারি সহয়তা খুবই জরুরি বলে জানান তারা।

সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার অধিকাংশ অভ্যান্তরীন সড়ক তলিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পেড়েছে। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে তলিয়েছে টিউবওয়েল, শৌচাগার। গরু-ছাগল নিয়ে উঁচু সড়ক, আশ্রয়কেন্দ্রে ও রেলওয়ে স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসী মানুষ।

একই উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কাছিমা এলাকার শরবানু ও সমত্ত্যবানু বলেন, ‘তিনদিন আগে ঘরে পানি উঠছে। কোন রকম খেয়ে, না খেয়ে এই তিনদিন থাকলাম। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বের হয়ছি। খুব কষ্টের মধ্যে আছি।’

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করা হচ্ছে। আরও বেশি করে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ থেকে মন্ত্রী নিজে তা মনিটরিং করবেন। মানুষের খাদ্য সঙ্কট থাকবে না।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যমুনা নদীর পানিতে চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক  মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত ৩২০ মেট্রিক টন চাল, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ত্রান সহায়তার পাশাপশি ও নগদ অথ বিতরণ করা হবে। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রে চিড়া, গুড়, মুড়ি ও খিচুড়ী রান্না করে বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি রয়েছে।’

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে স্থীতিশীল অবস্থায় রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘন্টা ধীরগতিতে পানি বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!