লালমনিরহাট: তিস্তায় পানি কমলেও ধরলা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৪০সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ধরলা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে রোববার তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে বিকাল ৩টায় পানি বিপদসীমার ১৯সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরআগে একই পয়েন্টে সকাল ৯টায় পানি বিপদসীমার অনেকটা কাছাকাছি মাত্র ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে গেলো ৬ ঘন্টায় পানি কমেছে ৬ সেন্টিমিটার।
এদিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা তিস্তা নদীর স্পার বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পাউবো কতৃপক্ষ জিও ব্যাগ ফেলেছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তিস্তা ভাটি এলাকার লাখো মানুষ।
শনিবার বিকালে মহিষখোচা গোবর্ধন তিস্তা ২নং স্পার বাঁধের সংযোগ স্থলে ধস দেখা দেয়। ধীরে ধীরে ধস প্রকট আকার ধারণ করলে তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়। তবে সাময়িকভাবে আটকানো গেলেও পানি বাড়লে পুরো বাধ ধসের শঙ্কা রয়েছে। এতে ভাটিতে থাকা অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
জানাগেছে, গত শুক্রবার ও শনিবার উজানের ঢলের সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়েন। এখনো নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে পানি রয়েছে। তবে রোববার বিকালে পানি কিছুটা কমেছে।
অপরদিকে ধরলা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৪০সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সদর উপজেলার মোগলহাট ও কুলাঘাট ও বড়বাড়ি ইউনিয়নের ৫হাজার পরিবার। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ধরলা চরের মানুষ।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তা চরের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, যখন নদীতে পানি থাকে না তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এর খবর রাখে না। এখন পানি বেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ স্পার-২ এ ধস হয়েছে, এখন জিও ব্যাগ ফেলছে। আগে ব্যবস্থা নিলে কয়েকটি বাড়ি রক্ষা পেত।
সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের বুমকা এলাকার ধরলা নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক জানান, শনিবার রাতে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বসতবাড়িতে পানি উঠে। এতে ভিজে যায় গরুর খড়ের পুঞ্জ। ডুবে গেছে রাস্তা ঘাট। রান্না করতে না পেরে পরিবার নিয়ে শুকনো খাবার খেয়ে আছি।
লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমলেও ধরলা নদীর পানি বেড়ে নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিচু অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা বাঁধের সিসি ব্লক ধসে যাওয়ায় জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন থেকে রক্ষা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও জিও ব্যাগ ফেলা হবে। তীরবর্তী মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি।
এমএস