• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

এলাকাবাসীর বিশ্বাসই হচ্ছে না দুর্নীতি করতে পারেন আবেদ আলী


মাদারীপুর প্রতিনিধি জুলাই ৯, ২০২৪, ১২:১০ পিএম
এলাকাবাসীর বিশ্বাসই হচ্ছে না দুর্নীতি করতে পারেন আবেদ আলী

মাদারীপুর : বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই আলোচনায় এসেছেন বিপিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। নিজ এলাকায় তিনি রাজনীতিবিদ, সামাজিক কর্মকাণ্ড, দান খয়রাত আর পরহেজগার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।

প্রশ্নফাঁসে তাঁর জড়িত থাকার তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পরেও তাঁর লেবাস দেখে গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ বিশ্বাস করতে পারছেন না সেই তথ্য। একজন পরহেজগার মানুষ যিনি প্রতি বছর হজ করেন, কোটি টাকার বেশি খরচ করে নিজ এলাকায় মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন তিনি দুর্নীতিতে জড়িত মানতে পারছেন না তাঁরা। তবে ফুটপাতে ঘুমিয়ে, কুলির কাজ থেকে কর্মজীবন শুরু করা জীবন কীভাবে এত অর্থ-বিত্তের মালিক হলেন সে সম্পর্কে ধারণা নেই তাদের।

প্রশ্নফাঁসের জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে ছেলেসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। গ্রেপ্তারের পর প্রশ্নফাঁস করে কত টাকা কামিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁস করে যত টাকা কামিয়েছি তা খরচ করে ফেলেছি আল্লাহর রাস্তায়।

চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের নিজ বাড়ি মাদারীপুরের ডাসারের বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামে। তিনি তাঁর নিজ নামে এই গ্রামে গড়ে তুলেছে বিলাসবহুল আলিশান বাড়ি ও মসজিদসহ সম্পদের পাহাড়। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁর ফ্লাটসহ একাধিক ভবন রয়েছে বলে তথ্য আসছে। নিজ বাড়ির পাশেই সরকারি জমি দখল করে গরুর ফার্ম তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। গৌরনদীর খাঞ্জাপুরেও রয়েছে তার একটি বাড়ি। সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় সান মেরিনা নামে বিলাসবহুল হোটেলে রয়েছে শেয়ার।

এছাড়া পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন একাধিক দামি বিলাসবহুল গাড়ি। নামে বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার জমি। বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসসহ বিভিন্ন দপ্তরে করতেন দালালী বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের স্বনামধন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ছবি তুলে নিজ ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। পরে সেই ছবি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দেখিয়ে সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আবেদ আলীর ছেলে ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ সোহান রহমান। তিনি কোটি টাকার গাড়ি ব্যবহার করছেন। সবশেষ উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন আবেদ আলী।

হঠাৎ দানবীর বনে যাওয়া আবেদ আলী জীবনের দুর্নীতির খবর শুনে হতবাক এলাকাবাসী। জানা গেছে, মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগে শত শত শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন তিনি। এরকমই একজন এলাকার মিন্টু সরদার বলেন, আমি অসহায়ত্বে পড়ে ২৬ শতাংশ ফসলি জমি আবেদের কাছে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা মাতুব্বর, হালিম তালুকদার ও সেলিম ফকির সহ অনেকেই জানান, আবেদ আলী এলাকায় গরীব অসহায় মানুষকে টাকাসহ বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন। তিনি অনেক ছোট বেলায় ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন। ঢাকায় কুলির কাজ ও রিক্সা চালিয়ে অনেক কষ্টের পর আজ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এলাকায় সকলের কাছে বর্তমানে একজন বড় ব্যবসায়ী ও হাজি হিসেবে পরিচিত।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ইতিমধ্যে আমরা আবেদ আলীকে নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেছি বিভিন্ন দপ্তরে। তার অবৈধ কোন সম্পদ আছে কিনা এবং সেগুলোর সঠিকভাবে ক্রয় ও কর দেওয়া হয়েছে কিনা এবং আইনের বাহিরে কোন অবৈধ সম্পদ গড়ে থাকে তাহলে আদালতে নির্দেশে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!