গাজীপুর: শৈশব থেকেই কৃষি ও কৃষকের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা দেখাতেন। গাজীপুরের শ্রীপুরের নিভৃত এক পল্লী গাঁয়ে জন্ম নেওয়া মোহাম্মদ সবুজ মিয়া নামে এক যুবক।
নিজের কর্মের তাগিদে কিছু দিন গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করলেও। সবুজের মন পড়ে থাকতো কৃষি আর কৃষকের প্রতি। পরে একটা সময়ে কৃষি কাজেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। আর এ কৃষি ভিওিক বিভিন্ন প্রজেক্ট করেই, যে অর্থ উপার্জন করেন। সেই অর্থ দিয়েই তিনি পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করেন।
এ ভাবে যখন তার দিনকাল ভালোই চলছিল। তখন হঠাৎ একদিন তার মাথায় চিন্তা চলে আসে। আমাদের দেশে দেশী আমের জন্য রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিখ্যাত। বিদেশি কোন জাতের আমের চাষাবাদ নেই বললেই চলে। তবে আমি যদি একটা বিদেশি আমের বাগান গড়ে তুলতে পারি। তাহলে আম চাষের নতুন দোয়ার উন্মোচন হবে। এর পাশাপাশি তরুণরা কৃষি কাজের প্রতি আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবেন।
পরবর্তীতে ২০২১ সালে লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজের জমিজমা না থাকলেও কয়েক বিগা জমি লিজ নিয়ে গড়ে তুলেন একটি বিদেশি জাতের আমের বাগান। তার এই আমের বাগান যদি কেউ দূর থেকে দেখে। তাহলে মনে হবে কলা। তবে কাছে গিয়ে দেখলে কলার মতো দেখতে সুন্দর ও সুশ্রী সাগর কলার মতো বিশেষ আম থাই ব্যানানা দেখতে পাওয়া যাবে। এর পরে দেখতে পাওয়া যাবে বিশ্ব বিখ্যাত আম তাইওয়ান গ্রীন। যা কিনা প্রতিটি গাছের থোকায়-থোকায় ঝুলে আছে।
এ রকম নানা দেশি-বিদেশি জাতের আম চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তাওক্কালনা ফুটর্স অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক সবুজ মিয়া। যা ইতিমধ্যেই সারা দেশেই সাড়া ফেলেছেন তিনি।
জেলার শ্রীপুর উপজেলার সাতখামারই পশ্চিম পাড়া গ্রামের বাসিন্দা তরুণ এই কৃষি উদ্যােগক্তার বাগানে শুধু তাইওয়ান গ্রীনই চমক দেখায়নি। এ রকম ধরনের বিশ্বখ্যাত নানা জাতের ও রঙের আরও বাহারি কয়েটি আমের শোভা পাচ্ছে বাগানে।
দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যময় সবুজের এই বিদেশি আমের মিশ্র বাগান দেখতে অনেকেই ইতিমধ্যে ছুটে আসছেন তার বাগানে।তেমনি এক যুবক মোহাম্মদ সোহেল রানা সোনালী নিউজকে জানান,বিদেশি আমের বাগান গড়ে কৃষি উদ্যােগক্তা যে সফলতা অর্জন করেছে। এটা নিঃসন্দেহে তরুণদের জন্য মডেল আদর্শ হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন,এক সময়ে ছোট্ট একটি কারখানায় চাকরি করতেন তিনি। সেই চাকরি বাদ দিয়ে কৃষি কাজে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে অর্থ নৈতিক স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে তুলে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন।
সবুজের তাওক্কালনা ফুটর্স অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেডে উচ্চ ফলনশীল তাইওয়ান গ্রীন আম দেখতে গাঢ় সবুজ রঙের। তবে এর একেকটি আমের ওজন ৯০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হতে পারে। আমটি শুধু আকৃতি ও ওজনের দিক থেকেই নয়,স্বাদে, গুণে,মানেও আম প্রেমীদের মন জয় করেছে। প্রতি কেজি আম বাগান থেকেই তিনি বিক্রি করছেন ১০০/১২০ টাকা এবং ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় এক জন ব্যক্তি কাছে সর্বোচ্চ ৫ কেজি আম বিক্রি করেন তিনি।
এই অদম্য কৃষি উদ্যােগক্তা সবুজের এমন সফলতার অর্জন দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
এলাকাবাসীরা জানান,দেশের অনেক শিক্ষিত তরুণ রয়েছে। যারা চাকরির পিছনে ঘোরে সময় নষ্ট করছে। তারা যদি বাড়ির পাশের পতিত জমিতে কৃষি খামার গড়ে তুলে। তাহলে নিজের ভাগ্য বদল করতে পারবে। সবুজের মতো দেশের অন্যসব এলাকার যুবকেরা এমন হলে দেশের কৃষি অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
জানা যায়,সবুজ মিয়া সাড়ে ৮ বিঘা জমিতে ১ হাজার ৫৫০টি আমের চারা রোপণ করেছিলেন। দুই বছর বয়সে গত বছর প্রথম ৫০০ গাছ থেকে দেড় টন আম ঘরে তোলেন। এখন বাগানের গাছের বয়স সাড়ে তিন বছর। এবার প্রায় ৮০০ গাছে ফল এসেছে।
এ বাগানে শুধু বিদেশে তাইওয়ান গ্রীন জাতের আমই নয়। এছাড়াও চাষ করা হয়েছে কাটিমন বা বারোমাসি আম। আমটিকে স্থানীয়ভাবে অমৃত নামেও ডাকা হয়। যেকোনো ও বারোমাসি আমের জাতের মধ্যে এটি আঁশহীন সেরা জাত। আরও আছে গৌরমতি জাতের আম। এসব সকল জাতের রয়েছে আলাদা আলাদা স্বাদের মিষ্টতা।
আমের তালিকায় বিশ্বের ৫ নম্বর স্থানে রয়েছে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডকমাই আম। সেই আমও চাষ হচ্ছে এই বাগানে। এক কথায় বিশ্বের বিখ্যাত বেশ কয়েকটি জাতের আম উৎপাদন করছেন তিনি। তার এই বাগানের প্রতি গাছ থেকে ১০-১২ কেজি ফল হারভেস্ট করা যাবে। গাছগুলো থেকে প্রায় ৭-৮ টন ফল হারভেস্ট করার আশাবাদী তিনি।সোনালী নিউজকে এই তরুণ উদীয়মান কৃষক জানান, প্রথম যখন তিনি আমের বাগান গড়ে তুলার পরিকল্পনা নেন। তখন অনেকই অবহেলা ও তিরস্কার করলেও। এখন সবাই তাকে সাধুবাদ জানাইতাছে। তিনি আরও বলেন,তরুণরা ইচ্ছে করলেই কৃষি খামার গড়ে তুলেই অর্থ উপার্জনের একমাত্র ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারবে। কৃষি খামার করেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সরকারের কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা পেলে কৃষি খাতে শিক্ষিত কৃষকের সংখ্যা দিন-দিন বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও জানান,আমের সফলতা পেয়েই ঘরে বসে নেই তিনি।এবার তিনি আম বাগানের পাশাপাশি দার্জিলিং কমলা চাষ করছেন। আগামী তিন মাস পরে এরও সফলতার চমক দেখাবেন বলে আশাবাদী তিনি।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন,কৃষিতে ভিন্নতা ও নতুনত্বের প্রতি সবারই নজর থাকে। সবুজের মতো তরুণা কৃষি খামারে এগিয়ে আসলে দেশের কৃষি অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি আরও বলেন,কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব সময় তরুণ খামারী ও কৃষি উদ্যােগক্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে।
এমএস/এসআই