• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এখনও কাঁদছে আসিফের মা, দিশেহারা বাবা


জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর জুলাই ২৯, ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
এখনও কাঁদছে আসিফের মা, দিশেহারা বাবা

শেরপুর: দুর্ঘটনার ভয়ে আমি পুলাডারে (ছেলে) হোন্ডার কিন্যা (কিনে) দেই নাই। অথচ বাপধনের শখ ছিল হোন্ডার কিনব। কিন্তু বাপধন তো গুলি খাইয়া মরল। আমার কইলজ্জার (কলিজার) টুকরা তো কোনো দল করত না, কোনো আন্দোলনেও যায় নাই। তাও গুলি কইরা আমার বাপেরে মারছে— কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন আসিফুর রহমানের (১৭) মা ফজিলা খাতুন। আর ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা আমজাদ হোসেন। আসিফের কথা বলতে গিয়ে কাঁদছেন অন্য স্বজনেরাও।

আসিফের গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামে। বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে ২য় ছিল আসিফুর। রাজধানীর মিরপুরে গত ১৯ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় গুলিতে নিহত হন আসিফুর।

স্বজনরা জানান, ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের আসিফ বছর খানেক ধরে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। আগামী মাস থেকে বাবার পাটের ব্যবসায় সাহায্য করার কথা ছিল তার। কিন্তু গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিরপুর এলাকায় সংঘর্ষে আসিফ গুলিবিদ্ধ হলে রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। কেরেঙ্গাপাড়া সামাজিক কবরস্থানে আসিফের মরদেহ দাফন করা হয়।

তারা আরও জানায়, ছয় ভাইবোনের মধ্যে আসিফ দ্বিতীয়। আসিফের বড় বোনের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়। অন্য ভাই-বোনদের নিয়ে তার মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আসিফের বাবা প্রায় ২০ বছর ধরে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় পাটের ব্যবসা করছেন।

কাঁদতে কাঁদতে আমজাদ হোসেন বলেন, আমার ছেলে তো কোনো রাজনীতি করত না। আমার সঙ্গেই ঢাকায় থাইকা একটা গার্মেন্টসে চাকরি করত। বাঁচবার লাইগা আমার বাপধন আমার কাছে কতই না আকুতি করছে। কিন্তু আমি তো বাঁচাইতে পারলাম না। মাথায় গুলি কইরা আমার পুলাডারে মারছে।

আমজাদ হোসেন বলেন, ওইদিন (১৯ জুলাই) জুম্মার নামাজ পইড়া একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাইয়া বাপ-পুলা ঘুমাইতে যাই। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলাডা কইলো একটু বন্ধুর সঙ্গে দেখা কইরা আসি। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছেলে ফোন কইরা বলে-আব্বু তুমি তাড়াতাড়ি আসো, আমি অ্যাক্সিডেন্টে করছি। খবর পাইয়াই আমি দৌড়াইয়া যখন যাই তখনো গুলি চলতাছে। কিন্তু গিয়া তো দেখি আমার পুলার মাথার ডান পাশে গুলির চিহ্ন লইয়া মিরপুরের আলোক হাসপাতালে পইড়া আছে।

বাবা আমজাদ হোসেন আরও বলেন, অইখান (আলোক হাসপাতাল) থাইক্কা রিকশায় কইরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়া যাই। সেখানে মাথায় ব্যান্ডেজ কইরা আমার বাপধনরে নিউরোসাইন্স হাসপাতালে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল) নিতে বলে। রিকশায় কইরা যখন নিউরোসাইন্সে নিয়ে যাই তখন বাপে ব্যথায় কাতরাইয়া কইতাছিল। আমার ওপর থাইক্কা দাবি ছাইড়া দিয়ো আব্বা। আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করবার পাইলাম না। আমি আর বাঁচমু না। পরে নিউরোসাইন্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক আসিফকে মৃত ঘোষণা করেন।

আসিফের মা ফজিলা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আসিফের শখ ছিল বাইক কিনব। দুর্ঘটনার ভয়ে আমরা কিন্যা দেই নাই। কিন্তু আমার বাপধন তো গুলি খাইয়া মরল। আমার কলিজার টুকরা তো কোনো দল করত না, কোনো আন্দোলনেও যায় নাই। তাও গুলি কইরা যারা আমার বাপেরে মারছে আল্লাগ তাগো বিচার কই।

আসিফের চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, নিউরোসাইন্স হাসপাতাল থেকে তিন হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মরদেহ মিরপুরে আনা হয়। পরে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে রাত সাড়ে ৩টার দিকে আসিফের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পরেরদিন সকাল সাড়ে ৭টায় এসে পৌঁছায়। আসিফ খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। আমাদের সবার আদরের ছিল। আসিফকে হাঁরিয়ে আমরা হতভম্ব। আল্লাহ যেন আমার ভাইকে বেহেস্ত নসীব করে, সেই দোয়া চাই। 

এমএস

Wordbridge School
Link copied!