ফরিদপুর: আলফাডাঙ্গায় প্রবীণ সাংবাদিক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান অপদস্ত করার অভিযোগে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক মিয়া রাকিবুলকে তার প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মিয়া রাকিবুল সাজাপ্রাপ্ত নাম করা চিহ্নিত রাজাকার মুন্নু মিয়ার নাতি।
রোববার ২৮ জুলাই বিকেলে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের একাধিক সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ মিয়া রাকিবুলকে প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কারের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
মিয়া রাকিবুল বার্তা বাজার, গণমানুষের আওয়াজ এবং ইংরেজি ট্রিবিউনাল পত্রিকার আলফাডাঙ্গা প্রতিনিধি এবং উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাট্টিগ্রামের মাহামুদ মিয়ার ছেলে।
প্রেসক্লাব সূত্রে যানা যায়, গত ৪ জুলাই দুপুরে উপজেলা চত্ত্বরে প্রেসক্লাবের গঠন্তন্ত্র নিয়ে আলোচনাকালে প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক মিয়া রাকিবুল একই প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান টুনু মিয়াকে অশ্রাব্য ভাষায় অপমান, অপদস্ত করে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ শে জুলাই শুক্রবার বিকালে প্রেসক্লাব কার্যালযয়ে এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সেকেন্দার আলম। আলোচনা শেষে সকল সাংবাদিকদের সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসক্লাব থেকে মিয়া রাকিবুলকে বহিষ্কার এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকলের সাক্ষরিত একটি রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে তাকে ৩ মাসের জন্য প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়।
প্রেসক্লাবের একাধিক সিনিয়র সাংবাদিক ক্ষোভের সাথে বলেন, মিয়া রাকিবুল একটা বেয়াদব, তিন বছরের মত প্রেস ক্লাবের সদস্য হয়ে বার্তা বাজার ও গণ মানুষের আওয়াজ পত্রিকার নাম বিক্রি করে সমস্ত উপজেলায় সংবাদিকতার নামে অপ-সাংবাদিকতা করে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশের ভয়-ভীতি দেখিয়ে সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সম্মানহানির হুমকি দিয়ে টাকা নিয়ে থাকে। তার এমন নীরব চাঁদাবাজির হাত থেকে কেউ রেহায় পাইনা। সরকারি দপ্তরেও কৌশলে কথা বলে টাকা দাবি করত সে।
সাংবাদিকতার আড়ালে সেবামূলক কার্যক্রমের কথা বলে সামজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে 'হৃদয়ে আলফাডাঙ্গা' নামক একটি গ্রুপ খুলে সেবামূলক সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রবাসী ও সুধীজনের থেকেও নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে তা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহারের অভিযোগও আছে এই কলঙ্কিত সাংবাদিক মিয়া রাকিবুলের বিরুদ্ধে।
প্রেসক্লাবের সাংবাদিক আবুল বাশার বলেন একজন জুনিয়র সাংবাদিক হয়ে সিনিয়ারদের অসম্মান ও অপমান জনক কথাবার্তা বলতে দ্বিধান্বিত হত না সে। ইতিপূর্বে বেশ কয়েক বার প্রেসক্লাবে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসাই তাকে সাবধানতা অবলম্বন করার সতর্কতা দেয় প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রেসক্লাবের অপর সিনিয়র সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান বলেন, মিয়া রাকিবুল সাংবাদিকতার নামে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করে আসছিলো দীর্ঘদিন। তাকে আজীবন বহিষ্কার করা উচিৎ ছিলো।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী প্রবীণ সাংবাদিক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা খান আসাদুজ্জামান টুনু বলেন, রাকিবুল আমার নাতির সমবয়সী হয়ে সংগঠনের সংবিধান প্রসঙ্গে আলাপকালে আমাকে অপমান অপদস্ত ও কুটুক্তি করে। আমি অপমান সহ্য না করতে পেরে মনের দুঃখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি। একজন স্বকৃীত রাজাকারের নাতি হয়ে রাকিবুল একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে অপমান করতে পারে না। ক্লাবে আলোচনায় সভায় সবাইকে উদ্দেশ্য করে আমি বলেছি, " তোমাদের সাথে আমার সাংবাদিকতার করার ইচ্ছা নাই। আমাকে তোমরা সম্মান করো বা না করো,তবে অপমান করার ধৃষ্টতা তোমাদের কাউকে দেয় নাই। "
মিয়া রাকিবুল নিজের বহিস্কারের কথাটি স্বীকার করে বলেন, সবইতো জানেন আপনারা যেটা ঘটেছে সেটাইতো স্বাভাবিক। সাক্ষাতে বিস্তারিত বলব। পরে রাকিবুল আর সাক্ষাৎ করে নাই এবং একাধিকবার ফোন দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আমিনুর রহমান আচ্চু মিয়া বলেন, মিয়া রাকিবুল একটা বেয়াদব, বড়দের সম্মান দিতে জানেনা। টুনু ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক এবং শিক্ষক তার সাথে সে বেয়াদবি করেছে এর আগে আরও অনেকের সাথে একই কাজ করায় তাকে ৩ মাসের জন্য ক্লাব থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম জানান, এটা আমাদের ঘরোয়া ব্যাপার। বাইরে বক্তব্য দেওয়া নিষেধ তবে মিয়া রাকিবুলকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিয়া রাকিবুল একজন রাজাকারের নাতি হয়ে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার সাহস পাই? আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই, সেই সাথে তার বিরুদ্ধে আইনি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাই।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :