ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন চাঁদপুরের মিজানুর রহমান মিলন। তিনি রাজধানীর নতুন বাজারের নদ্দা এলাকার একটি দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসিবে কাজ করতেন। স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে কঠিন জীবনযুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছেন শোকে মূহ্যমান স্ত্রী ঝর্ণা বেগম।
স্বামীর এমন করুণ পরিণতি বিশ্বাস হচ্ছিল না ঝর্ণা বেগমের।
শেষ পর্যন্ত মরদেহ গ্রামে পৌঁছালো তাকে বিশ্বাস করতেই হয়। তবে একমাত্র আয়ের মানুষটিকে হারিয়ে গৃহবধূ ঝর্ণা বেগম আর তার সন্তানের চোখে ও মুখে এখন ঘোর অন্ধকার। পরিবারে আয়ের একমাত্র মানুষটি নেই। এমনটি বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে তার। তাই যারাই তাকে সান্ত্বনা দিতে যান তারাও শোকে ভেঙে পড়ছেন।
মিলনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের পিংড়া এলাকায়। তিনি মৃত খলিলুর রহমান তপাদারের ছেলে। স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের পরিবার।
ছেলে রবিউল তপাদার চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে এবং মেয়ে ফারজানা পিংড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। মিলনের আয়েই গোটা পরিবার চলত। বর্তমানে চাঁদপুর শহরের রহমতপুর কলোনিতে এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে ঝর্ণা বেগম ও তার দুই সন্তান।
নিহতের স্বজন মনিরুজ্জামান তপাদার জানান, গত ২১ জুলাই বিকেলে রাজধানীর নদ্দা এলাকার মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন মিলন। ফেরার পথে দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন মিলন।
তারপর হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় কে বা কাদের গুলিতে মিলন প্রাণ হারালেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্ত্রী ঝর্ণা বেগমের কাছে স্বামীর এমন করুণ পরিণতি বিশ্বাস হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত মরদেহ যখন গ্রামে পৌঁছালো তখন তাকে বিশ্বাস করতেই হয়। তবে একমাত্র আয়ের মানুষটিকে হারিয়ে গৃহবধূ ঝর্ণা বেগম আর তার সন্তানের চোখে ও মুখে এখন ঘোর অন্ধকার।
ঝর্ণা বেগম জানান, তার স্বামী মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে সর্বশেষ বাড়ি আসেন। মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগেও তার সঙ্গে কথা বলেন। তবে এমন তরতাজা মানুষটি চলে যাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে নিদারূণ আর্থিক সঙ্কট ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে।
তিনি আরো জানান, তার স্বামী মিজানুর রহমান মিলন চাকরি কারণে নদ্দা এলাকায় থাকতেন। সেখানে একটি প্রসাধন সামগ্রি বিক্রয়কর্মী ছিলেন তিনি।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা মজিবুর রহমান রুবেল বলেন, মিলন ভাই কোনো রাজনীতি করতেন না। সবার সঙ্গে তার হৃদ্যতা ছিল। সবসময় তার মুখে হাসি ছিল। তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো নয়। এখন একটাই দাবি, নিহত মিজানুর রহমান মিলনের পরিবারকে রক্ষায় মানবিক সহায়তা নিয়ে সরকার যেন পাশে দাঁড়ায়।
আইএ