বরিশাল : পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল রংমিস্ত্রি জামাল হোসেন সিকদারের। প্রবাসে যাওয়ার পাঁচ দিন আগে একটি গুলি কেড়ে নিয়েছে জামালের প্রাণ।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার শরিকল ইউনিয়নের পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের মৃত মহসিন সিকদারের ছেলে জামাল হোসেন সিকদার (৩৮)।
রংমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা জামাল স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাসন্তানকে নিয়ে ঢাকার রায়েরবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
২০ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কেনাকাটার জন্য বেরিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোডের পাইনদী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জামাল।
জামালের শ্যালক মো. তাওহীদ বলেন, তার ভগ্নিপতি জামাল সৌদি আরবে একটি সুপার শপে চাকরির ভিসা পেয়েছিলেন। সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় সবকিছু ব্যবস্থা করেছিলেন। ২৫ জুলাই সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল তার। যাওয়ার আগে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখা করছিলেন।
তিনি জানান, ২০ জুলাই সকালে তাকে সঙ্গে নিয়ে চিটাগাং রোড পাইনদী নতুন মহল্লা এলাকায় খালার সঙ্গে দেখা করেন জামাল। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কেনাকাটার জন্য খালার বাসা থেকে বের হন। তারপরই পাইনদী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
তাওহীদ বলেন, গৌরনদীর পালরদী নদীতে জামালের বাড়ি ভেঙে গেছে। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে রংমিস্ত্রির কাজ করে জমানো ও ধারদেনা করে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা যুগিয়েছিলেন তিনি।
একটি বুলেট সব তছনছ করে দিয়েছে। ভগ্নিপতির নিজের বাড়িও নেই। সন্তানকে নিয়ে বোন কোথায় থাকবে, কী করবে- এ নিয়ে সবাই দুচিন্তায় রয়েছি।
ঋণে জর্জরিত জামালের পরিবার এখন দিশেহারা। ঋণের টাকা পরিশোধ, সন্তানের পড়াশুনা ও পারিবারিক ব্যয় নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন স্ত্রীসহ স্বজনরা।
১৭ জুলাই একমাত্র মেয়ে নুজহাত হোসেন জিতুকে ধানমন্ডি বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজে ভর্তি করেছেন জামাল। স্বপ্ন ছিলো মেয়ে পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করবে।
মেয়ে জিতু বলে, বাবা ছিল আমার একমাত্র আশ্রয়স্থল। আল্লাহ আমার আশ্রয়স্থল কেড়ে নিয়েছে। জানি না কী করে মাকে নিয়ে আগামী দিনগুলো চলব। কিভাবে আমি পড়াশোনা করবো?
বাবা বলত, ‘আমি বিদেশ গিয়ে টাকা পাঠাবো। তুমি ভালভাবে পড়াশোনা করবা। মা, তুমি আমার স্বপ্ন পূরণ করবা।
জিতুর প্রশ্ন, এখন তার কী হবে?
দাফনের জন্য স্বামীর লাশ নিয়ে গ্রামে এসে বাড়িঘর না থাকায় মেয়েকে নিয়ে পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের মোবারক মালের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন জামালের পরিবার।
জামালের স্ত্রী শিউলী আফরোজ বলেন, নদী বাড়িঘর গ্রাস করার পরে ২০০২ সালে স্বামী তাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। বড় ভাই আবুল কালাম রংমিস্ত্রির কাজ করেন। তার সঙ্গে থেকে রংমিস্ত্রির কাজ শেখেন। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতেন তিনি।
পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে অনেক দিনের আশা ছিল বিদেশ যাবে, মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে অনেক বড় করবে। ধারদেনা করা টাকা কিভাবে শোধ করব?
সন্তানের পড়াশুনার ও পরিবারের ব্যয়ের টাকা কোথায় পাবেন, সেই দুচিন্তায় দিন কাটছে শিউলীর।
এমটিআই