নান্দাইল: গত ২১ জুলাই নরসিংদী সদর তানিয়া ডায়িং কোম্পানির সামনে কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মো. জামান মিয়া।
ছেলের এই মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেননা পিতা শহীদুল ইসলাম ।ছেলের ছবি নিয়ে পিতার আহাজারি থামছেইনা। আমার নিষ্পাপ ছেলেডারে পুলিশ কেন গুলি করে মরলো?সেতো কোন রাজনীতি করে না।কোটা আন্দোলনও করছেনা। সেতো সাধারণ শ্রমিক আছিল।
নিহত মো. জামান মিয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের ১নং দেউলডাংরা ওয়ার্ডের মো. শহীদুল ইসলামের পুত্র। সে নরসিংদী সদর এলাকায় তানিয়া ডায়িং কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে গত দুই বছর আগে মো. জামান মিয়া পারিবারিক স্বচ্ছলতা ফিরে আনতে নরসিংদী সদরে তানিয়া ডায়িং কোম্পানিতে ১৫ হাজার টাকা বেতনে শ্রমিকের চাকরী নেয়। সেখানেই একটি মেসে থেকে চাকরী করতো।
গত ২১ জুলাই সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে মেস থেকে বের হয়ে কোম্পানির পথে সামনে যেতেই পুলিশ গুলি করে। পাশাপাশি দুটি গুলি তার পেটের ডান পাশ দিয়ে ছিন্দ্র করে বাম পাশ দিয়ে বের হয়। এতে সে সড়কে দেড় ঘন্টা পড়ে ছিল। স্থানীয় ও আত্নীয়দের সহযোগিতায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চার দিন চিকিৎসার পর ২৫ জুলাই সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটে জামান মিয়ার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ময়নাতদন্ত করে ঐদিনই মো. জামানের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। রাত ১০ টার দিকে নান্দাইলের দেউলডাংরা গ্রামে সামাজিক কবরস্থানে মরদহে দাফণ করা হয়।
নিহত জামান মিয়ার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়- টিনশেটের একটি ঘরের ভিতরে বসে মা মিনারা বেগম ছেলের জন্য কান্না করছে। তার পাশেই পরিবারের লোকজন সান্তনা দিচ্ছে। সাংবাদিক আসছে খবরে শুনে ঘর থেকে মিনারা বেগম বলে উঠে আমার ছেলেটারে কি ফিরিয়ে দিতে পারবেন?
এমন সময় জামান মিয়ার বাবা শহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে ছেলের ছবি দেখিয়ে অপলোক দৃষ্টি থাকিয়ে থাকে। প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে জামানের মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
জানা গেছে- নিহত জামানের পিতা মো. শহিদুল ইসলাম বাড়ির পাশে একটি ছোট মনিহারি দোকানে ব্যবসা করে। ৬ ছেলে মেয়ের মধ্যে জামান মিয়া ৪র্থ সন্তান। শ্রমিকের চাকরী করে সংসারের ব্যয় বহন করতো।
নিহত জামানের বড় ভাই মো. রায়হান মিয়া ভাইয়ের অকাল মৃত্যুর কথা আক্ষেপ করে বলেন- আমার ভাই আর কোন দিন ফিরে আসবে না। কেনই বা আমার ভাইকে এইভাবে গুলি করে হত্যা করলো। আমরা দুনিয়ার বিচার চাইবো না, আখিরাতের বিচার চাইবো।
নিহত জামান মিয়ার মা মিনারা বেগম বলেন - শ্রমিকের কাজ করে ছেলেটা আমাকে চলার জন্য টাকা পাঠাতো। অহনতো আর কেউ টাকা পাঠাইতনা।আমরা কিভাবে চলাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মিলন মিয়া বলেন- ছেলেটি একটি কোম্পানিতে চাকুরী করতো। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় কোম্পানিতে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।
এমএস