রাজশাহী: রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে হামলা, ছাত্র হত্যা ও ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এইসময় পাশ্ববর্তী কয়েকটি বিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত জানিয়ে অংশ নিতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ সমাবেশ শুরু করেন তারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটের শিক্ষকরাও একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। সরকার বিরোধী নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আমরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। আর কত ঘরে বসে আমার ছেলেদের রক্ত দেখবো। শিক্ষার্থীদের গায়ে গুলি করতে স্বৈরাচার সরকারের কি একটুও বুক কাঁপেনি? আজ থেকে এ আন্দোলনে গুলি চালালে সেই গুলি আগে শিক্ষকদের গায়ে লাগবে, তারপর আমাদের ছাত্রদের। শিক্ষার্থীদের আর কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই, তাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা আজ থেকে তাদের সামনে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি এবং তাদেরকে সুরক্ষা দিতে সবসময় তাদের সঙ্গেই আমরা আছি। গণহত্যার দায় স্বীকার করে স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন এ অধ্যাপক।
আন্দোলনকারীরা দুপুরের দিকে কাজলা গেট হয়ে ভদ্রা মোড় পার হয়ে রেলগেট শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এই সময় সংবাদ সংগ্রহে আসলে তারা সাংবাদিকদের উপরে চড়াও হয় এবং ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সেখা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেয় এবং ভিতরে ভাংচুর করে। এইসময় এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন।
পুলিশ জানায়, সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে তারা রুয়েটের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। একই সময় মহানগরীর নর্দান মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের আরও একটি মিছিল এসে সড়ক অবরোধকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।
পরে আন্দোলনকারীরা রুয়েটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তালাইমারি হয়ে নর্দানের মোড়ে যান। সেখান থেকে ঘুরে একই স্থানে এসে আবারও বিক্ষোভে কর্মসূচিতে মিলিত হন।
এ সময় বৃষ্টি কারণে তালাইমারি মোড়ে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে সরে যান। তবে বিক্ষুব্ধরা এ বৃষ্টির মধ্যেই তাদের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যান। পরে পুলিশ আবারও সেখানে সতর্ক অবস্থান নেয়।
রাজশাহীর মতিহার থানার ওসি শেখ মোবারক পারভেজ জানান, আন্দোলনরতরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করলেও পরিস্থিতি এখনও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। তালাইমারিতে অবরোধ করলেও বিভিন্ন যানবাহন পাশের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটসহ আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিরোধ করবে।
সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে হামলা ও খুনের প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবিতে শনিবার সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা সংশ্লিষ্টদের রুয়েট গেটে জমায়েত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আইএ