• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে সফল খামারী সালমা 


গাজীপুর প্রতিনিধি আগস্ট ২০, ২০২৪, ১১:২১ এএম
গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে সফল খামারী সালমা 

ছবি : প্রতিনিধি

গাজীপুর: ২০২০ সালে সারা দেশেই যখন করোনা মহামারি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। তখন এর প্রভাবে দেশের অন্যান্য শিল্পের মতো পোল্ট্রি ও খামার শিল্পেও বড় ধরনের লোকসানের ধাক্কা লাগে। দেশের অনেক বড়-বড় খামারীরা এ ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারলেও। গ্রামগঞ্জের প্রান্তিক পর্যায়ের শত-শত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এবং হাঁস-মুরগি পালনকারী খামারিরা মুখ থুবড়ে পড়েন। এতে করে একের পর এক লোকসান গুণতে-গুণতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এসব প্রান্তিক খামারীরা। 

তবে করোনা কালিন এ সময়ে হাজারও বাঁধা আর দুরচিন্তাকে দুরে ফেলে দিয়ে দৃঢ় তৃপ্ত মনোবল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা গার্মেন্টস শ্রমিক সালমা।তিনি ওই সময়ে গার্মেন্টসের চাকরির পাশাপাশি পরের যায়গা লিজ নিয়ে একটা টাইগার মুরগীর খামার গড়ে তুলেন। উদ্দেশ্য চাকরির পাশাপাশি সংসারের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের অর্থ উপার্জন করা। এ জন্য সালমা সংসার সুন্দর ভাবে পরিচালনার লক্ষে এবং বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পরের একটু যায়গা লিজ নিয়ে ছোট পরিসরে একটি টাইগার মুরগির খামার গড়ে তুলেন। কঠিন ত্যাগ ও অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই তার সেই স্বপ্নের টাইগার মুরগির খামার থেকে ভাল মুনাফা লাভ করেন।

এরপর থেকেই তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার খামারে নিজে বাচ্চা উৎপাদন করছেন। ১ পিস বাচ্চা বর্তমানে ৫০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে আর এসব বাচ্চা বিক্রি করেই সব খরচ বাদে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন তিনি। 

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, শুধু টাইগার মুরগিই নয় যে কোন মুরগির খামার গড়ে যে কেউই লাভবান হতে পারবে। যদি মুরগি পালনের সঠিক নিয়ম এবং পরিচর্যা ভাল ভাবে মেনে চলা হয়। বিশেষ করে মুরগীর রোগপ্রতিষেধক বিষয়ে ভাল ভাবে খেয়াল রাখতে হবে। 

এ জন্য ৭-১০ দিন পর্যন্ত টাইগার মুরগি এ সময়ে এসে অবশ্যই মুরগি গুলোকে সব সময় পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দেখতে হবে সেগুলো সুস্থ আছে কিনা। যদি মুরগি গুলো বেশি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই অভিজ্ঞ ভ্যাটেরিনারি ডক্টর এর পরামর্শ নিয়ে পরবর্তীতে রোগপ্রতিরোধের জন্য ওষুধের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। 

এছাড়া সহজেই যাতে খামারে ভাইরাস জনিত রোগবালাই হানা দিতে না পারে সেজন্য ৭ থেকে ১০ দিন এই সময়ে এর মধ্যে টাইগার মুরগী গুলোকে সকালে Oravita 1gm-3ml মোট এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

অপর দিকে টাইগার মুরগির খাদ্য তালিকায় বাজারের প্রচলিত খাবার দিলেই হবে। তবে খাদ্য তৈরীর সময খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রোটিন ১৮% ও ফ্যাট ৫% এর কম না হয়। টাইগার মুরগি খামারে আবদ্ধ অবস্থায় বা ছেড়ে দিয়ে দুই ভাবেই পালন করা যায়। ডিপ লিটার পদ্ধতিতে ও খাচায় পালন করা যায়।  

নারী উদ্যােগক্তা তরুণ উদীয়মান খামারী সালমা আক্তার বলেন, গাজীপুরে এক সময়ে পোল্ট্রি শিল্পের জয়জয়কার ছিলো। কিন্তু নানা কারণে এ শিল্পে ধ্বস নামে। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে আমার মতো আরও অনেকেই চাকরির পাশাপাশি অথবা সরাসরি মুরগির খামার গড়ে তুলে বেকার জীবনের অবসান ঘটাতে পারবেন। আর যারা নারী উদ্যােগক্তা রয়েছে তারা সংসার চালানোর পাশাপাশি মুরগির খামার গড়ে তুলে স্বামীকে অর্থ নৈতিক ভাবে সহয়তা প্রদান করে সংসার সুখের করতে পারেন। 

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা: নারগিস খানম জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খামারীদের জন্য সরকারি যে সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে সে গুলো দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও তরুণ খামারীদের সকল ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন,অনেক গার্মেন্টস শ্রমিক নারী উদ্যােগক্তা চাকরির পাশাপাশি সংসারের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে কৃষি খামার গড়ে ব্যাপক সফলতা অর্জন করছেন। এটা সমাজের জন্য বড় ভাল একটি দিক। দেশের হারনো খামার শিল্প নারীদের অগ্রগতির মাধ্যমেই আবারও ফিরে আসবে বলে তিনি আশাবাদী। 

এসআই

Wordbridge School
Link copied!