• ঢাকা
  • বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দী প্রায় ৪ লাখ মানুষ 


কুমিল্লা প্রতিনিধি আগস্ট ২৩, ২০২৪, ০৮:২৯ পিএম
গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দী প্রায় ৪ লাখ মানুষ 

কুমিল্লা: টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের ঢলে প্রবল স্রোতে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে দুই উপজেলা বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ আগষ্ট) আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোমতী নদীর উত্তর পশ্চিম পাশে বুরবুড়িয়া নামের বাঁধটি ভেঙে যায়। 

এতে প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বেড়িবাঁধে ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয় গ্রামের মানুষগুলো। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পানির প্রবল ঢেউয়ের এক পর্যায়ে বুরবুড়িয়া বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এসময় স্থানীয়রা ফাটল বন্ধ করতে গিয়ে দেখে সেখানে গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়ে পানি বের হচ্ছে। এক পর্যায়ে পানির স্রোত বাড়তে থাকে ও সেই গর্তের আকার বড় হতে থাকে ও সেখান দিয়ে প্রবল গতিতে পানি বের হতে থাকে। এসময়, পানিতে প্লাবিত হয়ে যায় আশেপাশের জনবসতি। পরে পানির স্রোতে বাঁধের প্রস্থ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। 

এদিকে, সরেজমিনে শুক্রবার (২৩ আগষ্ট) বুরবুড়িয়া বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লোকালয় তলিয়ে গিয়েছে পানিতে। প্রবল স্রোতে বেড়িবাঁধের গাছগুলো একের পর এক ভেঙ্গে স্রোতের সঙ্গে ভেসে চলে যাচ্ছে। এসময়, স্থানীয়রা লোকজনদেরকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। 

কেউ কেউ নিজেদের আসবাবপত্র ও গৃহপালিত পশু নিয়ে বসে রয়েছেন বেড়িবাঁধে। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে অবসন্ন হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন তাদের বসতভিটার দিকে। এদিকে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার কাজ করছে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী। বিভিন্ন স্পিড বোড ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। 

এদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মিথিলাপুর এলাকার দুইটি আশ্রয় কেন্দ্রও নিচতলা পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। এতে আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষদের ভোগান্তিও পৌঁছেছে চরমে। জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। এছাড়াও, গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কুমিল্লা শহরে বসবাসকারী মানুষররাও। এদিকে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, গোমতীর বাঁধ ভাঙায় তলিয়ে যেতে পারে গোটা শহর।

ইতিমধ্যে, প্লাবিত গ্রামগুলো হলো বুড়বুড়িয়া, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর, বেড়াজাল, শ্যামপুর, গোবিন্দপুর সহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রাম। 

জীবন ঝুঁকির কথা প্রকাশ করে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরআ বলেন, আমাদের আপাতত ত্রাণ লাগবে না ভাই। আমাদের জীবন বাঁচান আপনারা। প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। আমাদের অনেক মানুষ বাড়িতে আটকা পড়ে আছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা স্পীড বোট দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন। 

এই বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আকতার বলেন, বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া অংশে পানি বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ের ভেতরে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল প্রবাহের সাথে বাঁধ ভাঙ্গার প্রস্থ বাড়ছে। অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। সকলকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। 

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বলেন, বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতীর বাঁধে ধসের ঘটনা ঘটেছে। ফলে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। আমরা গত কয়েকদিন ধরেই স্থানীয় মানুষজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আসছি। আমাদের টিম কাজ করছে। এছাড়াও, বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার কারণে গোমতী নদীতে পানির উচ্চতা কমছে। শুক্রবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত পানি বিপদসীমা থেকে ২৫ সেন্টিমিটার থেকে কমে ১০৯ সেন্টিমিটার এ এসেছে। 

এদিকে জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আর তেমন ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আশা করি আবহাওয়া অনুকূলে আসার কারণে পানির চাপও কমবে।

এআর

Wordbridge School
Link copied!