ঠাকুরগাঁও: বিগত কয়েকদিনে তুলনায় ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সবচেয়ে বেশি মানুষ পাসপোর্ট করতে এসেছেন। প্রতিদিন শত-শত মানুষ আসছেন পাসপোর্ট করতে। এর আগে একসাথে এক মানুষের ভিড় এই পাসপোর্ট অফিসে কখনো দেখা যায়নি। আর ধারণ ক্ষমতার বাইরে অধিক সংখ্যক গ্রাহক পাসপোর্ট করতে আসায় হিমশিম খাচ্ছে পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।
পাসপোর্ট অফিসের তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে পাসপোর্ট আবেদন বাবদ মাসে প্রায় দেড় কোটি রাজস্ব আয় হলেও বর্তমানে বেড়েছে এর পরিমাণ।
মঙ্গলবার (২৭ অগাস্ট) সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসের সামনের রাস্তায় দেখা যায় অস্বাভাবিক রকমের ভিড়। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন পাসপোর্ট আবেদনকারীরা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন বয়স্ক নারী, পুরুষ, থেকে শুরু করে নানা বয়সীরা।
স্বাভাবিক সময়ে ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৬০টি আবেদন জমা পরে। তবে বৈষম্য বিরোধী গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের এক সাপ্তাহ পর থেকে এ সংখ্যা বেড়েছে পাঁচগুণের বেশি। হঠাৎ আবেদনকারীর সংখ্যা এত বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত চাঁপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আবেদনের কাগজপত্র জমা নিলেও একই দিন ছবি তোলা কিংবা আগুলের ছাঁপ নিতে না পারায় ভোগান্তিতে পরছেন সেবা প্রত্যাশীরা।
ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, নতুন পাসপোর্ট কিংবা নবায়নে নতুন করে ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের আইরিশসহ ছবি তোলা হচ্ছে নতুন করে। এতে করে নতুন করে ছবি তোলা, আইরিশ নেয়া এবং স্বাক্ষর করার কাজ করতে হচ্ছে অপারেটরদের। প্রতিটি কাজে গড়ে পাঁচ-সাত মিনিট সময় লাগছে। এর মধ্যে সার্ভার ডাউনসহ নানা ধরণের প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনাও বড় ধরণের সংকট তৈরি করছে। ফলে হঠাৎ করে ধারণ ক্ষমতার বাইরে অধিক সংখ্যক গ্রাহক পাসপোর্ট করতে আসায় তাদের কাঙ্খিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
পাসপোর্ট করতে আসা রূপসী রানী বলেন, সামনে পূজা আর দেশের এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছি। কিন্তু পাসপোর্ট করতে পারবো কিনা বলতে পারছি না। লাইন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।
হরিপুর উপজেলা থেকে আসা দীলিপ জানান, সকালে এসে লাইন ধরেছি। তার আগে আরও অনেকেই লাইন ধরেন। সকাল থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়ায়। কখন আবেদন জমা দিতে পারবো কে জানে! শুধু দীলপ নন, এই ধরণের সহস্রাধিক মানুষ প্রতিদিন সকাল থেকে লাইনে ধরে পাসপোর্টের আবেদন জমা দেন।
লাইনে দাড়িয়ে থাকা গৌতম নামে এক ছাত্র বলেন, বিশেষ করে আমাদের মধ্যে খুব বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার জন্য সবাই পাসপোর্ট করতে এসেছি। পাসপোর্ট করে আমি ভারতে গিয়ে পড়াশোনা করবো। এছাড়া অনেকেই বলছেন চিকিৎসার জন্য, কেউ বলছেন তীর্থে যাবে আবার কেউবা বলছেন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করতে যাবে।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সমাজ উন্নয়নকর্মী মনিরুজ্জামান মিলন জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতের দিকে চলে যাওয়ার পর থেকেই দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করা হয়। আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও হামলার শিকার হয়। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বড় ধরণের কোন সমস্যার বা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হয়নি। তারপরও তাদের মধ্যে এক ধরণের ভীতির সঞ্চার হয়েছে। যে কারণে আগের চেয়ে যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে তাঁরা বেশি পাসপোর্ট করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঠাকুরগাঁওয়ের উপ-সহকারি পরিচালক মোঃ রুকুনুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, আগে দৈনিক সর্বোচ্চ ৬০-৭০ টি আবেদন জমা হতো। আর এখন প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টিরও বেশি পাসপোর্ট এর আবেদন জমা হয়। হঠাৎ অতিরিক্ত সেবাগ্রহিতা হওয়ায় আমাদের যে পরিমান জনবল আছে, সে অনুযায়ী আমাদের পক্ষে তাদের কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়ে উঠতেছে না। সেক্ষেত্রে আমরা রাত পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় কাজ করে সেবা গ্রহীতাদের সঠিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এসআই
আপনার মতামত লিখুন :