• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৪০০ কোটি টাকার মাছ


কুমিল্লা প্রতিনিধি আগস্ট ২৯, ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম
বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৪০০ কোটি টাকার মাছ

কুমিল্লা : কুমিল্লায় ৫৬০ শতক জমিতে মাছের ঘের তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন তরুণ উদ্যোক্তা ফয়সাল আহম্মদ। তার বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের সোনাইসার গ্রামে। বাড়ির পাশে মাছের ঘেরটিতে সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করতেন। নৌকায় করে মাছের খাবার ছিটিয়ে দিতেন ঘেরের পুকুরগুলোতে। স্বপ্ন দেখতেন মাছ বড় হবে। সেই মাছগুলো বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবেন।

মুনাফা থেকে ব্যাংক ঋণ শোধ করে বাকি টাকা জমিয়ে ঘেরের পরিধি আরও বৃদ্ধি করবেন। তবে তার সেই স্বপ্ন ভেসে গেল বন্যার পানিতে।  ঘেরে ছিল রুই, কাতল, কার্প, তেলাপিয়া, মৃগেল, পাঙ্গাস মাছ। একমাস পর একেকটি মাছের ওজন হতো দুই থেকে আড়াই কেজি।

বুধবার (২৮ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়,  বিস্তৃত মাছের ঘের অন্তত ১৫ ফুট পানির নিচে। পাড় ডুবে গেছে। বিলের পানি ঘেরের পানিতে একাকার। ঘেরের পাশের জমিতে এলাকার লোকজন কনুই জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে। তাদের জালে ঘেরের সেই মাছগুলো ধরাও পড়ছে। মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে সেসব দৃশ্য দেখছেন ফয়সাল আহম্মদ। তার চোখে-মুখে করুণ চাহনী।

ফয়সাল আহম্মদ জানান, ২০১৪ সাল থেকে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। ব্যাংক থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। তার বাবা আবদুল হালিম বেগ। বাবার নামে তৈরি  মাছের ঘেরটি নিয়ে স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া।

গত ২২ অগাস্ট রাতে কুমিল্লার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। ২৩ অগাস্ট রাতে ভারী বৃষ্টি ও গোমতীর ভাঙনে তলিয়ে যায় মাছের ঘেরটি। সকাল বেলা ঘেরের পাড়ে জাল দিয়েও মাছ রক্ষা করতে পারেননি। এখন ব্যাংকের ঋণ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

কুমিল্লা সদর উপজেলার শিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান। দীর্ঘদিন কুয়েতে ছিলেন। এখন দেশে আছেন। তার গ্রামের বাড়ি বুড়িচং উপজেলার জরইন গ্রামে। তার  মাছ  চাষের অংশীদার জরইন গ্রামের ইতালি প্রবাসী আমিনুল ইসলাম। দুজনে মিলে ২০২১ সাল থেকে মাছ চাষ করেন৷

চলতি বছর দুজনে মিলে প্রবাস থেকে আয় করা ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন মাছ চাষে।  জরইনের পাশে রাজাপুর গ্রামে ১৩টি পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন তারা। গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে তাদের ১৩ টি পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা অসহায় হয়ে গেলাম। বলা যায়  প্রবাস জীবনের প্রায় সব অর্থ বিনিয়োগ করেছিলাম মাছ চাষে। আমাদের স্বপ্ন ভেসে গেছে।’ গত তিন-চার দিন ধরে মেহেদী ও আমিনুল তাদের পুকুরের চার পাশে ঘুরে বেড়ান আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

এদিকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির প্লাবনভূমির মৎস্য ঘেরগুলো উচু বাঁধের জন্য রক্ষা পেলেও ভেসে গেছে সহস্রাধিক পুকুরের মাছ।

দাউদকান্দি উপজেলার মৎস্য চাষী আলী আহম্মদ মিয়াজী জানান, তারা মাছের ঘের রক্ষা করতে পেরেছেন। তবে বিভিন্ন গ্রামের পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে তলিয়ে যগেছে।

কুমিল্লা মৎস কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন জানান, ভারী বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে কুমিল্লায় মাছের ঘের ও পুকুর-দীঘি  থেকে ৪০০ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এগুলোর মধ্যে কুমিল্লার পাঁচ হাজার ৮৩৬ একর জমিতে তৈরি করা মাছের ঘেরসহ দুই হাজার ৩৪টি পুকুরের মাছ ছিল। যার মধ্যে ১০ টন চিংড়ি মাছসহ অন্তত ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের পোনা মাছও রয়েছে।

মৎস্য কর্মকর্তা বেলাল আরও জানান, সম্প্রতি মৎস্য উপদেষ্টা, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কুমিল্লার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাদের কাছে ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!