খুলনা: খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪১ চিকিৎসককে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বুধবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আসেনি বহির্বিভাগের অধিকাংশ চিকিৎসক। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামানকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এছাড়া ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেন কার্ডিওলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোস্তফা কামাল। ফলে বুধবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে হাসপাতালে আসেনি অনেক চিকিৎসক।
সরেজমিনে হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, বর্হিবিভাগের প্রীতম চক্রবর্তী, ডাঃ হিমেল সাহা, ডাঃ অনিরুদ্ধ সরদার, ডাঃ শেখ তাসনুভা আলম, ডাঃ সুব্রত কুমার মন্ডল, আরএমও ডাঃ সুহাস রঞ্জন হালদার, ডাঃ দীপ কুমার দাশ, আরএমও ডাঃ সুমন রায়, ডাঃ তড়িৎ কান্তি ঘোষ, ডাঃ নিরুপম মন্ডল, ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন, ডাঃ রনি দেবনাথ তালুকদার, ডাঃ মিথুন কুমার পাল, ডাঃ জিল্লুর রহমান তরুণ ও ডঃ শিবেন্দু মিস্ত্রিসহ প্রায় ২০ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত রয়েছেন। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় তারা হাসপাতালে আসেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া খুমেক হাসপাতালের রেজিস্ট্রার সহকারি, রেজিস্ট্রার কনসালট্যান্টসহ আরও ২১ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।
বটিয়াঘাটা থেকে আসা রবিউল ইসলাম নামে এক রুগী বলেন, বাড়ি থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছি সকাল ১০টার দিকে। দুপুর গড়িয়ে আসলেও চিকিৎসক আসেননি। আমি একজন কৃষক সারাদিন খেতে কয় টাকা পাই আর এসেছি আবার কাল আসতে পারবো কিনা বলতে পারি না। আর্থিক সমস্যা আছে। অথচ এসে ডাক্তার দেখাতে পারিনি। শুধু আমি নই, অন্য রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন।
হাসপাতালে আসা রোগী রুমানা বেগম বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছি সেই সকালে, এখনও দেখাতে পারিনি। আজ তো দেখাতে পারিনি, আগামীকালও ডাক্তার আসবে কি না জানি না।
ডাক্তারদের রুমের সামনে রোগীদের সিরিয়াল দেখভালের দায়িত্বরতরা জানান, সকালে আমরা এসেছি। এসে দেখি চিকিৎসকরা আসেননি। ফোন করলে তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা, এ জন্য আসেননি। রোগীরা আসছেন, আবার ফিরে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডাঃ সুমন রায় মুঠোফোনে বলেন, গতকাল ইনটার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। এসময় ডাক্তার মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী এসে আমাদের ঘিরে ধরে। পরে তারা উপপরিচালককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। আর আমাদের প্রায় ৫১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় আমরা আসিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের সহ- সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, গত ১৬ বছর বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তারা নিগৃহের শিকার হোক আমরা চাই না। আমরা জানতে পেরেছি অনেকেই ব্যক্তিগত আক্রোশ মিটাচ্ছেন। একজনকে সরিয়ে দিয়ে আরেকজনকে বসানোর একটা ফাইদা লোটার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, এখানে বার বার একজন ডাক্তারের নাম উঠে আসছে। তিনি হলেন কার্ডিওলোজি বিভাগের ডাঃ মোস্তফা কামাল। উনাকে আমরা পায়নি। উনার ব্যাপারেও আমরা তদন্ত করে দেখছি। কাউকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া আমরা সমর্থন করি না। কাউকে সরাতে হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একদিনেই ৪০ জনকে সরিয়ে দিলে চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হবে। পুরো খুলনা বিভাগে এর প্রভাব পড়ছে। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি, স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গেও কথা বলবো। এখানে ২টা পার্ট রয়েছে, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা। শিক্ষা পার্টের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এই কাজটি করেছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগে শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার নেই, এখানে খুলনা বিভাগের নাগরিক ও রোগীদের অধিকারটাই বেশি। আমরা চিকিৎসকদের একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই।
এসএস