বরগুনা: উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনা পাথরঘাটায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম দ্বিতীয় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এখানে মৎস্য খাতে বরফের চাহিদা অপরিসীম। জেলে, আড়ৎদার, পাইকারসহ মৎস্য ব্যবসায়ী সকলের মাছ সংরক্ষণ থেকে বাজারজাত করন পর্যন্ত প্রয়োজন হয় বরফের। কিন্তু বরফকল মালিকদের সিন্ডিকেটের মুখে জিম্মি হয়ে পরছে হাজারো ট্রলার মালিকসহ মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজেদের মতো করে বাড়ানো হয় বরফের দাম। বরফের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পরেছে মাছের উপর। আর এ সিন্ডিকেট যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা হলেন, খাজা বরফকলের মালিক মিহির বাবু, মায়ের দোয়া বরফকলের মালিক সেলিম চৌধুরী এবং এমি বরফকলের মালিক সোহাগ।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ট্রলার মালিক ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা বরফকল মালিক সমিতি নামে একটি সমিতির আওতায় ২২ টি বরফকল রয়েছে। এ সমিতি দুই বছর যাবত বরফকল মালিকরা মিলে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বরফ দ্বিগুনেরও বেশি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করছে। আগে বিক্রি হতো ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তাছাড়া জেলে বা মৎস্য ব্যবসায়ীরা নিজের খুশি মতো যেকোনো বরফকল থেকে বরফ কিনতে পারছে না।
বরফ কিনতে হলে আগে ওই সমিতির কাছে টাকা জমা দিতে হয়। এরপর তাদের কাছ থেকে একটি টোকেন নিতে হয়। সমিতি থেকে জেলেদের যে বরফকল থেকে বরফ কিনতে পারবে সেই বরফকলের নাম নির্ধারণ করে বলে দেয়া হয়। জেলেরা ওই বরফকল ছাড়া অন্য কোনো বরফকল থেকে বরফ কিনতে পারেন না। এছাড়াও জেলেদের অপরিপূর্ণ বরফ দেওয়া হয়, এর প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে করা হয় দুর্ব্যবহার।
বরফকল মালিকদের সিন্ডিকেটের মুখ থেকে বাঁচাতে ট্রলার মালিক ও বরগুনা জেলা মৎসবীজ ট্রলার মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম আকন নিজেই বরফকল কিনেছেন। সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে গিয়ে বরফ তৈরি করে জেলেদের কাছে কম দামে বিক্রি করছেন তিনি।
সিন্ডিকেটের বিষয় মাসুম আকন বলেন, বর্তমানে এক ক্যান বরফ তৈরি করতে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা খরচ হয়। এই বরফ ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করে বরফকল মালিকদের সিন্ডিকেট। গত আগষ্ট মাসের ২ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত সমিতির মাধ্যমে বরফ কিনেছি। তখন বরফ কিনতে হয়েছে ১৭০ টাকায়। সকল বরফকল মালিকরা মিলে একটি সিন্ডিকেটের তৈরি করে জেলেদের জিম্মি করে রেখেছে।
উপজেলা বরফকল মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক সেলিম চৌধুরী কাছে সিন্ডিকেটের জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট নিয়ে যত অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সমিতি থেকে কোন সিন্ডিকেট করা হয়নি, এমনকি অতিরিক্ত মুল্যে বিক্রিও হয় না। তিনি আরও বলেন, একটি বরফের বিপরীতে খরচ হয় ১২৮ টাকা, যা বিক্রি করা হয় ১৫০ টাকায়।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বরফ মালিকদের একটি সিন্ডিকেট চলছে যা জেলেসহ মৎস্যজীবীদের প্রতি এক রকমের নির্যাতন করছে। বরফ সিন্ডিকেট করার বরফকল মালিক সমিতির কোন এখতিয়ার নেই। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ বিষয় পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, এমন সিন্ডিকেটের অভিযোগ শুনেছি। এই বিষয় নিয়ে সকল বরফমিল মালিক ও মৎস্যজীবীদের সাথে একটি মিটিং এর আয়োজন করে এইরকম অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসএস