চাঁদপুর: চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে নামমাত্র কাজ করেই বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন প্রকল্প-খাত থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের এমন অভিযোগ দেয়া হয়েছে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর।
সূত্রমতে, গত ২ সেপ্টেম্বর শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের নূরুল ইসলামের ছেলে শাহাদাত হোসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগে শাহাদাত হোসেন উল্লেখ করেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ইউনিয়নের ভূমি উন্নয়ন কর থেকে প্রাপ্ত ১% অর্থের বিপরীতে দেয়া ইউনিয়নের গ্রাম খিলা মেহের আলী মুন্সি বাড়ি হইতে রুহুল আমিন ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণ প্রকল্প দেখিয়ে দশ লাখ টাকার প্রকল্প দেন।এই প্রকল্পে তড়িঘড়ি করে দেড় লাখ টাকার নামমাত্র কাজ করে বাকি আট লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে।এছাড়াও এই চেয়ারম্যান আরও বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাত করেন বলে অভিযোগকারী অভিযোগে উল্লেখ করেন।
অপরদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর একই ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাহমুদ আলম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও অনিয়ম দুর্নীতির আরও পাঁচটি অভিযোগ করেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, একই ইউনিয়নের নাহারা মনু মিয়ার বাড়ি থেকে জলিল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ (ইজিপিপি) প্রকল্পে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় ১৮ জন উপকারভোগীর বিপরীতে।সেখানে ১৯০ ফুট রাস্তায় মাত্র তিন দিন কাজ করেই প্রকল্পের ৭৫% টাকা উত্তোলন করেন।
এছাড়াও ইউনিয়নের পরানপুর -রামপুর রাস্তায় ভূমি উন্নয়ন কর থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে মাত্র ১৭০ ফুট আরসিসি ঢালাই কাজ করা হয়েছে।এই কাজেও অনিয়মের অভিযোগ উঠে চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে।
ইউনিয়নের পরানপুর দক্ষিণ মাঠে ইমিগ্রেশন ড্রেইন নির্মাণ প্রকল্প দেখিয়ে টিআর প্রকল্পের ৩ টন ৩০০ কেজি চাল উত্তোলন করার অভিযোগ উঠে চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কোনও কাজ হয়নি।এছাড়াও নাহারা নোয়াবাড়িতে ঘাটলা ও মোল্লা বাড়িতে কালভার্ট নির্মাণ না করেই এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।অপরদিকে পরানপুর নাহারা মাজার রোডে দুই লাখ সাতাশি হাজার টাকার অপর একটি প্রকল্প দেয়া হয়। প্রকল্পে মাত্র ১৮০ ফুট আরসিসি ঢালাই কাজ করেই প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নেন চেয়ারম্যান নিজেই। এসব ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও 'রাজ্জাক বাহিনীর' ভয়ে কেউ মুখ খুলতো না।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিগত সময়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন অতিদরিদ্রদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) প্রকল্পে অনিয়ম করে অভিনব কৌশলে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করেন চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট ১১০ জন উপকারভোগীর বিপরীতে ইউনিয়নে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রকল্প ছিল পাঁচটি। এর মধ্যে ৪নং ওয়ার্ডের আহম্মদ নগর মনিরের দোকান থেকে চটকি বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ ও প্রসন্নপুর পশ্চিম পাল বাড়ির মন্দিরের ডোবা ভরাটের জন্য ২৩ উপকারভোগীর প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল তিন লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এ রাস্তায় এক টাকার কাজও হয়নি। প্রসন্নপুর পালবাড়ির ডোবা ভরাট করা হয়েছে নামমাত্র। এমনকি প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী সাইনবোর্ডও লাগানো হয়নি। ৬নং ওয়ার্ড ঘুঘুরচপ উত্তর পাটওয়ারী বাড়ি থেকে হাজীবাড়ি পর্যন্ত রাজা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে উপকারভোগী ছিল ২০ জন। প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। এ রাস্তায় আগে থেকে ইটের সলিং থাকলেও প্রায় ১৫০ মিটার ইটের সলিংয়ের রাস্তার পাশে নামমাত্র মাটি দিয়ে প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যানসহ প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। ৭নং ওয়ার্ডের মিলা মনির উদ্দিন ভূইয়া বাড়ি থেকে খন্দকার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে উপকারভোগী ছিল ২০ জন। প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। এ প্রকল্পেও নামমাত্র রাস্তার পাশে মাটি দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে। ৮নং ওয়ার্ড বেরনাইয়া নুর আলমের বাড়ি থেকে খিলা মোল্লা বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে উপকারভোগী ছিল ২৭ জন। চার লাখ ৩২ হাজার টাকার এ প্রকল্পে বেরনাইয়া নূর আলমের বাড়ি থেকে খিলা মোল্লা বাড়ি পর্যন্ত প্রকল্প দেয়া হলেও কাজ হয়েছে নূরুল ইসলাম তালুকদার বাড়ি থেকে ছফিউল্লা মার্কেট পর্যন্ত। এ প্রকল্পেও নিয়ম অনুযায়ী মাটির কাজ করা হয়নি। এমনকি প্রকল্পের সভাপতিও জানতেন না কত টাকার প্রকল্প এটি।
এই বিষয়ে প্রকল্পের চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার বলেন, প্রকল্প সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।এসব প্রকল্প সব চেয়ারম্যান নিয়ন্ত্রণ করেন। লেনদেনও চেয়ারম্যানের হাতেই হয়।
এলাকাবাসী দাবি করেন নয়ছয় করে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করে এলাকায় টাকার কুমির বনেছেন এই চেয়ারম্যান।গড়েছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।হাসপাতাল ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রয় প্রতিষ্ঠান সহ অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন নামে বেনামে।
এসএস