পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কুয়াকাটার পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের মূল উৎস মৎস্য শিকার। গভীর সমুদ্রের উপর নির্ভর করে চলে কুয়াকাটার আনুমানিক দুই হাজার পরিবারের জীবন সঞ্চয়। তবে সঞ্চয় করা দূরের কথা, এখন জীবন নিয়ে বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে উপকূলের জেলেদের।
এই মৌসুমে সাগরে মাছ না পাওয়ায় এবং ৬৫ দিন সাগরে মাছ না ধরার সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায়। ঋণের বোঝা মাথায় চেপে, অলস ও বেকার সময় কাটায় তারা। কেউ বা আবার পাওনাদারের কথার ভয়ে, তার নিজ জন্মস্থান বসতবাড়ি ফেলে রেখে, পরিবার পরিজন নিয়ে রাতে আঁধারে ঘর ছারতে বাধ্য হয়েছে ক্ষুদ্র জেলে পরিবারটি।
অল্প পুঁজি নিয়ে পরিবারের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে একজন বাবার জীবন বাজি রেখে কঠোর পরিশ্রমে ছোট্ট একটি নৌকা নিয়ে গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকারে জান, তবে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় মৌসুমী বায়ু সহ হঠাৎ সমুদ্র উত্তলে অল্প টাকার মাছ ধরার সকল সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়, এতে ক্ষতির মুখে পড়ে তারা। কিন্তু থেমে যায়নি আবারো বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন, অন্যজন থেকে লাভের কথা বলে টাকা নেয়া, মাহাজনের কাছ থেকে অর্থ এনে পুনরায় আবারো শুরু করে মাছ শিকার।
বছরের পর বছর বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতির মুখে ক্ষুদ্র জেলেরা, এর কারণেই দিনদিন ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে এক পর্যায়ে নিজের জন্মভূমি বসত বাড়ি রেখে রাতের আঁধারে পালিয়ে গেছে এমন তথ্য রয়েছে। ইতি মধ্যেই ভিটা মাটি ছেড়ে চলে গেছেন ২০টি মত পরিবার এবং অনেকেই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মাছ ধরা থেকে সরে গিয়েছে আনুমানিক ৫০০ পরিবারের মত।
জেলে সেলিম গাজী বলেন, বিভিন্ন এনজিও এবং ধার দেনা করে ৪৫ লাখ টাকার জাল সাবার নিয়ে সাগরে পাঠিয়েছি। প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ পেলেও কিনারা নিয়ে আসতে পারেনি, আসার পথে হঠাৎ নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে আমার ট্রলার ডুবে যায় এখন আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। কার কাছে সহযোগিতা চাবো আওয়ামী লীগের যুগে শুনেই আসছি জেলেরা মোটা অংকের ঋণ পাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে তবে সেটা নামে আর কাগজ-কলমে রয়েছে আমরা জেলেরা কখনো পাইনি।
অন্যথায় শামসুল হক জেলে সোনালীনিউজ কে জানান, ছোট থেকে জেলে কাজ শুরু করি প্রায় ৪০ বছর জেলে কাজের সাথে জড়িত তারপরও ঋণের বোঝা হালকা করতে পারিনি। বয়সের ভারে সাগরে কাজ করা সম্ভব না তবে কিনারায় থেকে অন্যের জাল সেলাই করে অন্যথায় কাজ করে যে টাকা আসে নিজের সংসার চালাই এবং সেই ঋণ পরিশোধ করতেছি, জানিনা ঋণ পরিশোধ করে মরতে পারবো কি না।
ঘর ছাড়া জেলে ফোনে বলেন, নিজে বাঁচতে, নিজের সম্মান একটু হলেও টিকিয়ে রাখতে, রাতের আঁধারে অনেক দূরে চলে এসেছি। প্রথমে অল্প কিছু টাকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছি, ধীরে ধীরে আজকে ৩০ লাখ টাকার ঋণ আমার মাথার উপরে। তাই সহ্য করতে না পেরে ভিটামাটি ফেলে চলে এসেছি। আমি চেষ্টায় আছি বাহিরে কাজ করে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করব, তিনি আরো বলেন, আমার মত জেলে অনেক আছে যারা ঋণ করে আজকের নিঃস্ব হয়ে গেছে। সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের জ্যোতি কমে গেছে, ঋণ পরিশোধ করা তো দূরের কথা আরো উল্টো ভারী হচ্ছে ঋণ। জেলেদের কষ্ট জেলেরা ছাড়া কেউ বুঝেনা।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা সোনালী নিউজকে বলেন, আমরা প্রতিদিন জেলেদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি যাতে করে তাদের ঋণের বোঝা কমে আসে এবং আমাদের তরফ থেকে যতটা সম্ভব জেলেদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এসআই