• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

এক পা ছাড়াই চলছে দুলু মিয়ার জীবনযুদ্ধ


তুষার আচার্য্য, রংপুর সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
এক পা ছাড়াই চলছে দুলু মিয়ার জীবনযুদ্ধ

রংপুর: রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার পদাগঞ্জের বাসিন্দা দুলু মিয়া। ভ্রাম্যমাণ ফলের দোকানের আয়ে চালাতেন স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার। কিন্তু সেই সংসারে হঠাৎই নেমে আসে আঁধারের ঘনঘটা।

২০০৯ সালে দুলু মিয়ার পায়ে একটি ফোঁড়া উঠে। গ্রাম্য ফল ব্যবসায়ী দুলু মিয়া সেটিকে গুরুত্ব দেননি।কিন্তু সেই ফোঁড়াই যে তার জীবনের কাল হবে তা বুঝতে পারেননি তিনি। ফোঁড়া টি পঁচে গিয়ে ইনফেকশন হয়ে যায়। তারপর অপারেশন করে কেটে ফেলতে হয় তার ডান পা।

পা কেটে ফেলার পর বন্ধ হয়ে যায় দুলুর ভ্রাম্যমান ফলের ব্যবসা, সেই সাথে সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্র্য। তখন কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়েন দুলু মিয়া।

পা হারিয়ে পঙ্গু হলেও কারও সান্নিধ্যে বা আত্মসম্মান ক্ষুন্ন করে বাঁচতে চাননি তিনি। তাই তো তখন একটি বেসরকারি এনজিও তে যান অর্থ ঋণ নিতে।কিন্তু সমস্যা বাঁধে দুলু মিয়ার পঙ্গুত্ব। পঙ্গু ব্যক্তিকে ঋণ দিতে ভরসা পাচ্ছিলো না এনজিওটি। পরে দুলু মিয়া এনজিও ম্যানেজার কে জানান, তিনি ঋণ নিয়ে রিকশা কিনে তা চালিয়ে টাকা পরিশোধ করবেন। এনজিও ম্যানেজার দুলু মিয়ার অদম্য মনোবল দেখে ঋণ দেন এবং নিজেই সে টাকা দিয়ে ব্যবস্থা করে দেন একটি মোটরচালিত রিকশা।

এরপর আর পিছু ফিরে চাইতে হয়নি দুলু মিয়াকে। রিকশার চাকার সাথে ঘুড়ে গিয়েছে তার ভাগ্যের চাকা। রাজধানীর হেমায়েতপুরে দীর্ঘ ১৪ বছর রিকশা চালিয়েছেন।এই ১৪ বছরে এক ছেলে ও এক মেয়েকে শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছেন। তারপর ফিরে এসেছেন নিজ এলাকায়।

তিনি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন সিলেটে। একমাত্র ছেলেও চাকুরিসূত্রে স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটে থাকে। তাই স্ত্রীকে নিয়ে ষাটোর্ধ্ব দুলু মিয়া থাকেন বাড়িতে। প্রতিদিন সকালে রিকশা নিয়ে আসেন রংপুর শহরে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন করেন তাই নিয়ে ফিরে আসেন ঘরে। সেই অর্থ দিয়েই চলে সহধর্মীণীকে নিয়ে তার সংসার।

এমনই একদিন এই প্রতিবেদক যাত্রী হন দুলু মিয়ার রিকশায়। কথা ও গল্প হয় দীর্ঘক্ষণ। গল্পের এক পর্যায়ে তিনি জানান, ‌‌‘বাবা, কারো ভরসায় বাঁচার থেকি মরি যাওয়া ভালো। যখন পা টা হারাইলাম, তখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু কখনো কারো কাছে হাত পাতি নাই। পরে অনেক কষ্ট করে কিস্তি নিয়া রিকশা কিনছি। সেই রিকশা চালাই আজ বাড়ি করছি, জমি কিনছি, বাচ্চা দুইটাকে বিয়া দিছি। ছেলেটার চাকরি নিয়া দিছি বাবা। সব উপরআলার দোয়ায়।’

সন্তানের চাকরি আছে, তবুও ৬৫ বছর বয়সে কেন রিকশা চালাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাবারে আমি তো এখনো কাজ করতে পারি।আর কাজ না করলে ভালো লাগেনা। বাড়িতে বসে থাকতে পারিনা। কয়দিন আর ছেলে মেয়ের কাছে হাত পাতবো।যতোদিন বেঁচে আছি কাজ করে খাবো। তোমার চাঁচি আর আমি ভালা আছি বাবা।’

শারিরীক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে ১৪ বছর ধরে জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছেন এক পা হারানো দুলু মিয়া। অদম্য ইচ্ছাশক্তির এই মানুষটি রিকশা চালিয়ে কিনেছেন ১২ শতক জমি। সেই জমির একটি অংশে করেছেন আম বাগান আর অপর একটি অংশ দান করেছেন কবরস্থানের জন্য।

এসএস

Wordbridge School
Link copied!