গাজীপুর: ‘সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মাসিক বেতন হিসেবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করেছে। এর মধ্যে মূল বেতন ছয় হাজার ৭০০ টাকা, বাড়িভাড়া তিন হাজার ৩৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, পরিবহন ভাতা ৪৫০ টাকা ও খাদ্য ভাতা এক হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে এই বেতন দিয়ে আমরা কোন ভাবেই বাজারের দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া সামাল দিতে পারছিনা। ছেলে-মেয়ের পড়া লেখার খরচ যোগানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুর গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত পোশাক শ্রমিক রফিক সরকার। তার এই কথার মাঝে লুকিয়ে ছিলো সময়ের সাথে সাথে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার প্রতিবন্ধকতার কথা। রফিক সরকারের মতো অনেক শ্রমিকদের একই কথা। তারা বলছেন, বর্তমান বাজারদরের সাথে তাদের আয়ের বিস্তর ফারাক। পরিবার পরিজন নিয়ে এই আয়ে জীবন চালানো দুস্কর।
দেশের বৃহৎ শিল্পাঞ্চল গাজীপুর। জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে হাজারো শিল্প কারখানা। সূত্র মতে, জেলায় মোট নিবন্ধিত কারখানা রয়েছে দুই হাজার ৬৩৩ টি এবং অনিবন্ধিত কারখানা রয়েছে ৪০০/৫০০ টি। জেলাজুড়ে এসব শিল্প কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন প্রায় ২২ লাখ মানুষ। যার বেশির ভাগই পোশাক শিল্প কারখানার শ্রমিক। তবে বাজারে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা পড়েছেন পোশাক শ্রমিকসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত এই শিল্পাঞ্চলের লাখ-লাখ শ্রমজীবীরা মানুষেরা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই অস্থিরতার মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী মানুষেরা সরকারি বিভিন্ন ভাতা পেয়ে সংসারের দৈনন্দিন নিত্যপণ্যের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হলেও বেসরকারি চাকরিজীবী মানুষেরা কোন ভাবেই এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেনা। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন মিলকারখানায় কর্মরত শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও, বাড়েনি তাদের আয়ের পরিমান।
সরেজমিনে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে গিয়ে জানা গেছে, গত তিন বছর ধরেই দ্রব্যমূল্যের জাতাঁকলে নাজেহাল এ শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্টস, টেক্সটাইল সোয়েটারসহ বিভিন্ন মিলকারখানার শ্রমিকরা।
জানা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ২৫ টাকার মধ্যে। এক বছর পর বাজারে এখন একই আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দাম দ্বিগুণের বেশি হয়ে পড়েছে। টিসিবির হিসাবে ঢাকা ও এর আশেপাশের জেলাগুলোর মুদি বাজারে মোটা চাল, প্যাকেটজাত আটা, ময়দা, মসুর ও মুগ ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সব ধরনের মসলা, পাঙ্গাশ মাছসহ ব্রয়লার মুরগির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ বাজারে চিনির প্রতি কেজি দর ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। এছাড়াও চিনির পাশাপাশি চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, মসলাজাতীয় পণ্য, দুধ, ডিম, মাংস, সাবান, টুথপেস্ট- প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ বেশি। আর এসব দাম বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র তিন বছরের মধ্যে। অথচ সে হারে মানুষের অর্থ উপার্জন বৃদ্ধি পায়নি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পোশাক শ্রমিক ঊর্মি আক্তার বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫২-৫৬ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও, বাস্তবে বেড়েছে ২৫-২৮.৮৮ শতাংশ। তাও যে কয়টাকা বেতন বাড়াইছে এর পরেই জিনিসপত্রের দামও কয়েকগুণ বাড়াইয়া দিছে দোকানদারেরা।
এ বিষয়ে কথা হয় পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রফিকুল ইসলাম এর সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী পোশাক কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ নিলে শ্রমিকদের তেমন সমস্যা হবেনা। তিনি আরও বলেন, অনেক কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই নিত্যপণ্যের রেশনিং সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :