• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

সাতক্ষীরায় বাঁধ ভেঙে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, মাছ চাষি ও কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি


মোঃ রাহাত রাজা, সাতক্ষীরা সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ০২:৩৭ পিএম
সাতক্ষীরায় বাঁধ ভেঙে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, মাছ চাষি ও কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি

সাতক্ষীরা: টানা বৃষ্টি ও বেতনা নদীর রিংবাঁধ ভেঙে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় মৎস্য ও কৃষি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাছ চাষি এবং কৃষকরা।

কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে এসব খাতে। টানা বর্ষণে ভেসে গেছে বহু মাছের ঘের, পুকুর ও কৃষকের ফসল। একই সঙ্গে ভেসে গেছে ছয় হাজার মৎস্যঘের ও দেড় হাজার পুকুর। 

ফলে মৎস্য ও কৃষি খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।

জানা গেছে, গত তিন দিনের ভারী বর্ষণের কারণে সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশের বেতনা নদীর পাউবোর রিংবাঁধ গত রোববার সন্ধ্যায় ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে।

এলাকাবাসীরা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

তালা উপজেলা নগরঘাটা ইউনিয়নের পুরারবাজার এলাকার সমির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকায় ঘেরভেরি এবং বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। বাঁধ ভাঙার কারণে বেশি অসুবিধা হয়েছে আমাদের। আমার নিজের ব্যক্তিগত ৩১০ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেছিলাম, সেই মাছ সব ভেসে চলে গেছে। আড়াই কোটি থেকে তিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হতো, কিন্তু এখন ঘেরে কিছুই নেই। সব মাছ চলে গেছে। এই এলাকায় আরও বহুৎ ঘের তলিয়ে গেছে। বাড়ি পানি উঠেছে সে কারণে এলাকায় থাকা খাওয়ার খুব সমস্যা হচ্ছে।

একই এলাকার মোঃ জাবির আলী বলেন, আমার প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আগে একবার এই বাঁধ বাধা হলেও তা আবারো ভেঙে যায়। ১০ দিনেও এই বাঁধ বাধা সম্ভব হয়নি। 

সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বলেন, আমার ৩টি ঘের রয়েছে ১২০ বিঘা জমির ওপর। সবকটায় চাষ করা হয়েছিল সাদামাছ। বৃষ্টিতে সবগুলো ঘের তলিয়ে রয়েছে। সবমিলিয়ে আমার প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের কৃষক মো: আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছি, তার মধ্যে ৬ বিঘা পানিতে তলিয়ে গেছে, ৮ বিঘা জমিতে আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির পানি বেড়ে পুরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ধান গাছগুলো পানির নিচে পঁচে গেছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে গাছগুলো সব মারা যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মো. আনিছুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় গত কয়েন দিন যাবত অতিবৃষ্টি জনিত কারণে শ্যামনগর উপজেলা ও সাতক্ষীরা সদরের বেতনা নদীর একটা অংশ ভেঙে যাওয়ার কারণে তার আশপাশের ঘেরগুলো একেবারে পানির সাথে মিশে গেছে। 

তিনি বলেন, এখানে আমাদের মোট ৫ হাজার ২৩০ হেক্টর এরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে অধিকাংশ মাছই, এবং এতে মৎস্য চাষীদের ৬০০ কোটি টাকার অধিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সেটিও ৪ কোটি টাকার অধিক। এ ক্ষতির হাত থেকে চাষীদের রক্ষা করতে সহজ শর্তে যদি ঋণের ব্যবস্থা করা যেত, অথবা তাদের প্রণোদনের আওতায় আনা গেলে চাষিরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ৫ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি আমন মৌসুমে মাঠের শাকসবজি সহ ৯৮ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমির ধান লাগানো, তার মধ্যে হটাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আমাদের ৫ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৯ কোটির উর্ধে। এখানে কৃষক সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজার ৩৫০ এর মতো।

তিনি বলেন, এখন আমরা এই বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হওয়া জলবদ্ধতা যদি নিরসন করতে পারি, তাহলে সেসব যায়গায় আবার কৃষকদের পুনর্বাসিত করে এবং আমাদের পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে আবার শাকসবজি ও আগাম খাদ্যশস্য আবাদের দিকে অগ্রসর হতে পারবো। আশা করছি আবার সাতক্ষীরা জেলা ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারবে। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। 

এসএস

Wordbridge School
Link copied!