লালমনিরহাট: উজানের পাহাড়ি ঢল ও চলমান বৃষ্টিতে তিস্তার পানি ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ১০ সেন্টিমিটার উপরে উঠেছে। এতে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানির তীব্র চাপ রোধে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ৷
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহের মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার, যা স্বাভাবিক মাত্রা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার যে মাত্র ৫ সেন্টিমিটার কম। এর আগে সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি ১০ সেন্টিমিটার উপরে উঠেছে।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিক মাত্রা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার থেকে মাত্র ১ সেন্টিমিটার কম৷ এরআগে সকাল ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এখানেও ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তার বিভিন্ন অংশে বন্যা ও নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের চাষাবাদ করা ধানসহ নানাজাতের সবজির ক্ষেত।
গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু রংপুর বিভাগে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভারী বর্ষণের কারণে ছোট বড় নদ-নদীগুলোতে ইতোমধ্যে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তিস্তায় পানির উচ্চতা বাড়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর, খুনিয়াগাছ, আদিতমারীর মহিষখোঁচা, কালীগঞ্জের ভোটমারী, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিংগীমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলের মানুষজন।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের গোবরধন এলাকার বাসিন্দা রাইসুল ইসলাম (২৫) বলেন, ‘বৃষ্টিতে নদীর পানি উপচে ঘরবাড়ি রাস্তাঘাটসহ আশেপাশের সবকিছুই পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার লোকজন তাদের পরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানের দিকে ছুটছেন।’
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার কৃষক সাহিদুল ইসলাম সোহেল (৩২) বলেন, গত দুইদিনের বৃষ্টিতে তিস্তায় পানি বেড়েছে। এতে চরের আবাদ করা সবজি ক্ষেত, ধানের বীজতলা পানির নিচে ডুবে গেছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার রায় বলেন, ‘অতিমাত্রায় বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ লালমনিরহাটের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে, জেলার কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলায় কয়েকটি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। আমরা সবদিকেই খোঁজখবর রাখছি।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ পাউবো দপ্তরের পক্ষ থেকে নজর রাখা হচ্ছে। বন্যার যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
এসএস