• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত


আবদুল গফুর, নীলফামারী সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ১০:১৩ এএম
তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

নীলফামারী : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি  বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বাড়তে থাকে এবং রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬ টার পর থেকে বিপদসীমার  ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ৮টার পর থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করে এবং ৯টায় পানি কমে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় ।

এদিকে পানির গতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

হঠাৎ করে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়ীঘরে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের উপ-প্রকৌশলী রাশেদীন জানান,  উজানের ঢলে তিস্তার পানি ভোর থেকে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, শনিবার সকাল নয়টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কেন্দ্রটি জানায়, বৃহস্পতিবার সেখানে সকাল নয়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং বুধবার সকাল নয়টায় ১০৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার সকাল থেকে বাড়তে থাকে নদীর পানি।

এদিন সকাল নয়টায় ৩৯ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ৩৫ সেন্টিমিটার এবং বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর রাত থেকে বাড়তে থাকে।

তিস্তার পানি বাড়ার ফলে নদীর তীরবর্তী নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে বলে পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান।

এসব গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক মানুষের বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।

পূর্বছাতনাই ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, ভারত থেকে তিস্তা নদী প্রবেশ করেছে আমার ইউনিয়নের কালিগঞ্জ দিয়ে। পানি বাড়ার সঙ্গে আমার ইউনিয়নের পূর্বছাতনাই ও ঝাড়সিংহেশ্বর মৌজার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষের বাড়ির উঠান পর্যন্ত পানি প্রবেশ করেছে। এতে ওই দুই মৌজার এক হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

নদীতে পানি আরও বাড়ার আশঙ্কার এসব পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুপুরের দিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে আমার ইউনিয়নের প্লাবিত নিম্নাঞ্চল পরিদর্শন করে পানিবন্দী মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা।

ডিমলার খালিশাচাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রবিউল ইসলাম বলেন, গত তিনদিন ধরে তিস্তায় পানি বাড়ছে। শনিবার সকাল থেকে পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় তিস্তা পাড়ের পরিবারগুলো বন্যা আতঙ্কে রয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছে।

অব্যাহত পানি বাড়ার কারণে শনিবার ওই ইউনিয়নের পূর্ব বাইশপুকুর ও পশ্চিম বাইশপুকুর গ্রামে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

খালিশাচাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, সকালে নদীর পানি বেড়ে গ্রামের প্রবেশ করছে। এতে গ্রামের প্রায় তিনশ বিঘা জমিতে থাকা আধাপাকা আমন ধানের ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এক সপ্তাহ পানির নিচে নিমজ্জিত থাকলে ধানগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।

ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, তিস্তা পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে প্রায় ১২ হেক্টর আমন ধান ক্ষেত আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগযোগ রাখছি।

নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমে স্বাভাবিক হবে দাবি করে তিনি বলেন, এসব আমনের ক্ষেত এক সপ্তাহ পানিতে নিমজ্জিত থাকলেও তেমন ক্ষতি হবে না কৃষকের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আতিকুর রহমান বলেন, গত তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার পর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীরা পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

শুক্রবার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্ট এলাকায় ১৩৯ মিলিমিটার এবং শনিবার ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তিস্তা ব্যারেজারে সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সতর্কাবস্থায় আছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত পূর্বের দিনের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!