লালমনিরহাট: টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধিতে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরআগে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে সকাল ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহের মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এরআগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তার বিভিন্ন অংশে বন্যা ও নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের চাষাবাদ করা ধানসহ নানাজাতের সবজির ক্ষেত। পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। চর এলাকার রাস্তাঘাটগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গিমারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন।
তিস্তা চর গড্ডিমারী এলাকার ফজর আলী বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। গৃহপালিত পশু নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। রান্নার চুলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করা খাবার খেতে পারছি না। ঘরের টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার কৃষক সাহিদুল ইসলাম সোহেল (৩২) বলেন, গত তিনদিনের বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে গেছে। এতে আমাদের চরের আবাদ করা ধান তলিয়ে গেছে। ঘরে হাটু পরিমাণ পানি ঢুকেছে। গবাদি পশু নিয়ে বর্তমানে উঁচুতে স্থানে আশ্রয় নিছি।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাদল জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পানিবন্দী মানুষজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপপ্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে রোববার সকাল ৬টা থেকে বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ গেট খোলা রাখা হয়েছে।
এসএস