রংপুর: ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি এখন বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ফুলে-ফেঁপে উঠেছে উত্তরের নদ-নদীগুলো। তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, করতোয়া, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদ-নদী বিধৌত রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে তিস্তা। পানির স্রোতে অনেক ভয়ানকভাবে ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তার আশপাশের রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, গজঘণ্টা, আলমবিদির, নোহালী, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, মধুপুর, হারাগাছ, ঢুসমারা, শহীদবাগের গান্নার চর, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা, পাওটানার প্রায় ৫০টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব গ্রামের লোকজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দুপুরের দিকে পানি সামান্য কমলেও সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি আবারও বেড়েছে। তাই চরাঞ্চলবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাই এখন যে যার স্থানে দায়িত্ব, সেই স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লক্ষীটারী ইউনিয়নের চরইছলী, শংকরদাহ, নোহালী ইউনিয়ের চর বাগডোহরা, মিনারবাজার, দিলিপবাজার, নোহালীর চর, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনকর চর ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০০ বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া আলমবিদিতর ও গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আবাদি জমির ফসল তলিয়ে গেছে। অনেক পরিবার উঁচু স্থানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। কাউনিয়ার ঢুসমারাসহ পাঁচ দুর্গম চরাঞ্চলের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
লক্ষীটারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ১০ গ্রামের পাঁচ-ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এতে করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে।
নোহালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, তার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের আট গ্রাম ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া শত শত হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, ‘যে হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে, আজ রাতের মধ্যে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছি।’
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য ৭ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।’
তবে বন্যাদুর্গত মানুষজন অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছে এখনও কোনও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। গতকাল বিকাল থেকে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন তারা।
এদিকে, কাউনিয়া উপজেলার ঢুসমারার চর, আলালের চরসহ দুর্গম চরাঞ্চলে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যা রাতে আরও বাড়বে। তা ছাড়া পানি বাড়ায় তিস্তা সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে সব সময় মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ভেঙে না যায় সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। তবে দু-এক দিনে মধ্যে কমতে শুরু করবে।
এম