• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১
আগুনে ৬ জনের মৃত্যু

আগের দিন ১০ লিটার ডিজেল কিনে এনেছিলেন এমারুল


সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি অক্টোবর ৩, ২০২৪, ১২:১১ পিএম
আগের দিন ১০ লিটার ডিজেল কিনে এনেছিলেন এমারুল

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘরে আগুনে একই পরিবারের ছয়জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন। মধ্যরাতে ঘরটিতে কীভাবে আগুন লাগল তা ভেবে পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। এটা কি নিছক দুর্ঘটনা নাকি আত্মহত্যা নাকি এর পেছনে অন্য কিছু রয়েছে তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। বিষয়টি তদন্তের জন্য সিআইডি ও পিবিআই-এর একটি দল পুলিশকে সহায়তা করছে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরটিতে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন এমারুল মিয়া। পেশায় তিনি একজন ইঞ্জিনচালিত নৌকাচালক। ঘটনার একদিন আগে ১০ লিটার ডিজেল কিনে এনেছিলেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার এমারুল জয়শ্রী বাজার থেকে আপেল, আঙুরসহ বিভিন্ন ফল ও মোরগের মাংস কিনে নিয়ে আসেন। আত্মীয়সহ কাছের মানুষদের নিয়ে রাতে খাবার খায় এই পরিবার। দাওয়াত ছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরও।

এমারুল মিয়ার শ্বশুর চেরাগ আলী জানান, সোমবার বিকেলে এমারুল তার ঘরে গিয়ে রাতে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়ে আসেন। সেই রাতে পরিবার পরিজন নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন এমারুল। তবে চেরাগ আলী সেখানে যেতে পারেননি। তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম সেখানে খেতে গিয়েছিলেন।

চেরাগ আলী জানান, রাত ১২টার দিকে কামালের চিৎকার শুনে গিয়ে দেখেন এমারুলের ঘরের ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। আগুনে গরম হয়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে দরজা ভাঙতে পারছিলেন না। এরপর এক ঘণ্টার চেষ্টায় গ্রামের সবাই মিলে নেভানো হয় আগুন। পরে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন, সব ছাই হয়ে গেছে। একটি কক্ষে পাঁচজন এবং পাশের কক্ষে একজনের লাশ ছিল। পাশের কক্ষের লাশটা তার ছোট নাতিন ফাতিমার ছিল।

প্রতিবেশীরা জানান, এমারুল ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে হাওরে মাছ ধরতেন। ঘটনার আগের দিন ১০ লিটার ডিজেল কিনে এনে ঘরে রেখেছিলেন। তিনি কিছুটা রাগী স্বভাবের ছিলেন। বছর কয়েক আগে তার চলাফেরাও নাকি কিছুটা এলোমেলো ছিল। তবে বেশ কিছু দিন যাবত অনেকটাই শান্ত ছিলেন এমারুল। এমারুল নিজে থেকেই ঘরে আগুন দিয়েছেন কি না সে সন্দেহও উঁকি দিচ্ছে অনেকের মনে।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনা কীভাবে ঘটলো তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনই আমরা মন্তব্য করছি না যে তাদের কেউ হত্যা করেছে, কিংবা আত্মহত্যা করেছে এরা বা দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এবং পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটা ধারণা পেয়েছে যে, বৈদ্যুতিক কোনো শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনা তদন্তের জন্য সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও পিবিআইকে সহযোগিতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে। তদন্তের আগে এর বেশি বলা যাচ্ছে না।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহতদের স্বজন এবং গ্রামবাসীদের সাথে কথাও বলেন তিনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!