• ঢাকা
  • শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

কুমিল্লায় নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা, লাগাম টানবে কে?


মঈন নাসের খাঁন, কুমিল্লা অক্টোবর ৫, ২০২৪, ১২:৩৯ পিএম
কুমিল্লায় নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা, লাগাম টানবে কে?

ছবি : প্রতিনিধি

কুমিল্লা: বন্যা পরবর্তী কুমিল্লায় বাজারে বিরাজ করছে অস্থিতিশীলতা। সবজি থেকে শুরু সকল নিত্য পণ্যের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বিক্রেতারা বলছে, গত মাসে বন্যায় পুরো জেলা আক্রান্ত হয়েছে। ফলে মাছের ঘের, খামারসহ সবজির মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কম থাকায় দামের উপর প্রভাব পড়েছে। 

ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য থাকলেও সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি করছে। মুদি পণ্যের দোকান থেকে শুরু করে সকল ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে  রানীবাজার, রাজগঞ্জ, পদুয়া বাজার বিশ্বরোড বাজারগুলো সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, মাছের বাজারে প্রচুর ক্রেতার ভিড়। কিন্তু ক্রেতার ভিড়ের তুলনায় পর্যাপ্ত মাছ নেই বাজারে। কারণ হিসেবে জানা যায়, জেলাতে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মাছের ঘের, খামারসহ পুকুর, জলাশয় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চাষ করা মাছ ভেসে যায়। 

ফলে স্থানীয়ভাবে যেসব মাছ সরবরাহ হতো তা না আসায় বাজারে একটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য জেলা থেকেও যে সব মাছ আসতো তা কমে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। ভরা মৌসুমে ইলিশ বাজারে নেই। যেটা আছে তাও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। যা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

অন্যদিকে সবজির বাজারে দেখা যায়, মৌসুমী সবজির সরবরাহ কম থাকায় বাজারে ক্রেতাদের বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে বাজারে সবজি কম থাকাই এর কারণ বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। 

পাশের জেলা ফেনীতে সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এবারের বন্যায় ফেনী আক্রান্ত হওয়ায় সবজির মাঠ তলিয়ে যায়। ফলে সেখানেও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এর প্রভাব কুমিল্লার বাজারে পড়েছে। জেলার শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত গোমতিচর ও চান্দিনা উপজেলার নিমসার বাজার কৃষিখাত সম্পূর্ণ বন্যার কবলে পড়াও আরেকটি কারণ। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি।

মুরগির বাজারে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ১৪০-১৬০ টাকা থাকলেও এই সপ্তাহে তা বেড়ে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা কেজি দরে। কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকায়।

মুদি পণ্যের বাজারও অস্থিতিশীল। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ, চাল, ডালসহ অন্যান্য যেসব মুদি পণ্য রয়েছে সব কিছুর দামই বাড়তি। ফলে বিড়ম্বনায় রয়েছে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার।

তসলিম ইসলাম নামে একজন ব্যাংকার বলেন, যে বেতন পাই তা দিয়ে বাসা ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, প্রাইভেট শিক্ষকের খরচসহ সাংসারিক অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে বাজার খরচ রাখতে হয়। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় দেখা যাচ্ছে সাধ্যের ভিতরেও বাজার করতে হিমশিম খাচ্ছি। একটি পণ্য কিনতে গেলে অন্য পণ্যের উপর পড়ছে। বাসা থেকে বলেছে গরুর মাংস কিনতে। কিন্তু যে দাম তাতে সাহস পাচ্ছিনা। মাংস কিনতে গেলে অন্যান্য বাজার আর করা হয়না।

ফয়সাল আহম্মেদ নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবি বলেন, দুই ছেলে ভার্সিটিতে পড়ে। মাসের শুরুতেই তাদের খরচ পাঠাতে হয়। তারপর বাসা ভাড়া দিয়ে অন্যান্য খরচের তালিকা করতে হয়। তাতে দেখা যায়, বাজারের জন্য যে খরচ রাখি তা দিয়ে সংকুলান হয়না। বাজারের যে বাড়তি দাম তাতে আমরা মধ্যবিত্তরা পিষ্ট হচ্ছি। এক কেজি ওজনের রুই মাছ ৪শ টাকার উপর চাচ্ছে। তেলাপিয়া চাচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা কেজি। ছোট ছোট ইলিশ ১৫০০- ১৮০০ টাকা কেজি। যেগুলো আগে কিনতাম ৫০০-৫৫০ টাকায়। ডিমের হালি ৫৫-৫৬ টাকা।

কবির হোসেন নামে এক প্রবাসী বলেন, কষ্ট করে প্রবাসে কাজ করি। সন্তানরা ভালো স্কুলে পড়ে তার জন্য শহরে বাসা ভাড়া নিয়েছি। যে টাকা আয় করি তার কিছু অংশ নিজের জন্য রেখে দেশে পাঠিয়ে দিই। কিন্তু বাজারের দামের যে অবস্থা তাতে আমার পরিবার কিভাবে চলে, তা আমি বাজারে না আসলে বুঝতাম না। আয়ের সাথে ব্যয়ের কোনো সঙ্গতি নেই। সব কিছুতেই বাড়তি দাম। কোনটা রেখে কোনটার কথা বলবো।

তাহমিনা আক্তার নামে একজন গৃহিনী বলেন, স্বামীর যে আয় তা দিয়ে কোনো রকমে চলছি। খরচের সাথে পেরে উঠতে পারছিনা। অনেক সময় সন্তানদের আবদার রক্ষা করতে পারিনা। তিনি বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।

শিবলী আহম্মেদ নামে একজন মুদি ব্যবসায়ী বলেন, আমরা খুচরা বিক্রি করি। আড়ত থেকে যে দামে কিনি, সাথে পরিবহন খরচ ও শ্রমিক মজুরি দিয়ে সঙ্গতি রেখেই বিক্রি করি।

সুবেল নামে সবজি ব্যবসায়ী বলেন, বন্যায় আমাদের এখানে সব মাঠ ডুবে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। অন্য জেলা থেকেও তেমন আসছেনা। বেশি দামে আমাদের কিনতে হচ্ছে।

ফজলু নামে মাছ ব্যবসায়ী বলেন, নোয়াখালীর সব খামার ডুবে মাছ ভেসে গেছে। যশোর, সাতক্ষীরা, লক্ষীপুর, ফেনী থেকে মাছ আসছেনা। বাজারে মাছের সংকট। আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরাও আছি আরো সংকটে। বেশি দামে কিনে বিপদে আছি। ক্রেতারা যে দাম বলে সে দামে বিক্রি করলে লোকসান হবে।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পেলেই অভিযান চালাই। তাছাড়া আমাদেরও নিয়মিত বাজার মনিটরিং চলছে।

জেলা প্রশাসক মো.আমিরুল কায়ছার, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সে জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছি।

এসআই

Wordbridge School
Link copied!