ময়মনসিংহ : অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় ১৭ ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে; পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
এ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পূর্ণবাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র নারী-শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষ উঠেছেন। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয়রা জানান, নদ-নদীর পানি উপচে উপজেলার দর্শা, মেনংছড়া, বোরারঘাট ও সেওলা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
এতে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের মহিষলেটি, ধোপাজুড়া, কড়ইতলী, জুগলী ইউনিয়নের গামারীতলা, জিগাতলা, নয়াপাড়া, ছাতুগাও, কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, জয়রামকুড়া এলাকাসহ গাজীরভিটা ইউনিয়নের সূর্যপুর, সামিয়ানাপাড়া হাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের দর্শা, সেওলা ও মেনংছড়া এবং গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোরারঘাট নদীর তীরবর্তী বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েক হাজার বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে হালুয়াঘাট পৌরশহর, সদর ইউনিয়নসহ হালুয়াঘাট বাজারের বিভিন্ন অংশে পানি ডুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, মহাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারা এলাকায় পানি বেশি। শনিবার সকালে পাহাড়ি ঢলে সীমান্ত সড়কের ওপর তিন ফুট পানি ছিল। এলাকার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
সকাল ১১টার দিকে পানি কমা শুরু করলে আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।
ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। শুক্রবার দুপুরের দিকে শেওয়াল ও মেনেং নদীর দুটি অংশে পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে।
ঘরের ভেতর পানি না ঢুকলেও বাড়ির উঠানে পানি এসেছে; এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ১৫ হাজার ৪৩৮ হেক্টর ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে গেছে নয় হাজার ৭৮ হেক্টর, আংশিক ডুবেছে ছয় হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং সবজি খেত প্লাবিত হয়েছে ১৫৮ হেক্টর। তবে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। বৃষ্টি বাড়লে পানি আরও বাড়তে পারে। সাতটি ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া দুটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।
সাত ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওটা আনুমানিক বলছি। কারণ, অনেক এলাকায় এখনও কোনো খোঁজখবর নিতে পারিনি। সেইসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নৌকার অভাবে সব এলাকায় যেতে পারেনি।
তাছাড়া, এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মোবাইলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, সঠিক তথ্য আমরা পাইনি। সঠিক তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে। বন্যা দুর্গতদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া আছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবিদুর রহমান বলেন, সকালে পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। পরে টানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পানি আবার বেড়ে গেছে। চারটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে নারী-শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষ উঠেছেন। এ ছাড়া শতাধিক গরু ছাগলও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য ১০ হাজার টন খাদ্য সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলমান আছে।
ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, মৎস্য চাষিদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; তার সঠিক কোনো তথ্য এখনো আমাদের জানা নেই। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে আগামী ২৪ ঘণ্টা ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :