ময়মনসিংহ: অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে তিনটি উপজেলার ২১ ইউনিয়নের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ও মোবাইল নেটওয়ার্কও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে কার্যত সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এই তিন উপজেলা।
জেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
সানোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে এখন নারী শিশুসহ দেড় সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তিন উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন চাল খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, ধোবাউড়া বন্যা দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে প্রশাসন কিছু এলাকায় খাবারের ব্যবস্থা করছে। এছাড়াও নেতাই নদীর আশপাশের এলাকায় অন্তত অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। উপজেলার কলসিন্দুর, জিগাতলা, পঞ্চনন্দপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে পুরো উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।
ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বর, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের আংশিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আমন ফসল ও সবাজি খেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার। উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে, হালুয়াঘাটের প্রায় সব ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি খেত ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকার কারণে রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। মানুষজন অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হাছিনা আক্তার বানু বলেন, জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত সাত হাজার ৫০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত চার হাজার ২০০ হেক্টর। আর ৬০ হেক্টর সবজি খেত নিমজ্জিত হয়েছে। হালুয়াঘাটে সাত হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে চার হাজার ১০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে তিন হাজার ৫০০ হেক্টর। আর সবজি খেত নিমজ্জিত হয়েছে ৭৫ হেক্টর। ফুলপুরে নিমজ্জিত ধান তিন হাজার ৬৩০ হেক্টর। এরমধ্যে সম্পুর্ণ নিমজ্জিত এক হাজার ৪৮০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত দুই হাজার ১৫০ হেক্টর। আর সবজি খেত নিমজ্জিত হয়েছে ৬২ হেক্টর।
ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সাত হাজার ৮০ জন মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ৫০ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) সকালে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। বন্যাদুর্গত মানুষের খাদ্যসহ, যে চাহিদা; সেই মোতাবেক সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে। উপজেলাগুলোতে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছি। সবাই একসঙ্গে কাজ করছে। তাদের জন্য রান্না করা খাবার শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। সবাই মনে করছি, যদি বৃষ্টি কমে যায়; তাহলে পানি নেমে যাবে। তবে বৃষ্টি কমছে না। আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও একদিন বৃষ্টি থাকতে পারে। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :