শেরপুর: টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে শেরপুরের পাঁচ উপজেলা৷ তবে বৃষ্টি না থাকায় শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো পানিবন্দি রয়েছে লাখো মানুষ। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। এখনও অনেক জায়গাতেই পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সহায়তা পৌঁছানো হয়েছে।
এদিকে গত চারদিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় মোট ৮ জন মারা গেছেন।
বন্যার কারণে জেলার ২৪২টি প্রাথমিক ও ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে শিশু ও বয়স্ক নারীরা।
ইতোমধ্যে পৌনে দুই লাখ কৃষকের প্রায় পঞ্চাশ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে তিন হাজার মাছ চাষির মাছের ঘের ভেসে গিয়ে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাত থেকে উজানের পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও ভাটি এলাকায় অন্তত ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এপর্যন্ত ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত ১৭টি ইউনিয়নের ১২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নকলা, শ্রীবরদী ও সদর উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম। সব মিলিয়ে এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কমপক্ষে লক্ষাধিক মানুষ।
গত দুইদিন ধরে অনেক এলাকায় রাস্তায় অবস্থান করছে মানুষ। তাদের পাশেই রাখা হয়েছে গৃহপালিত গরু, ছাগল, ভেড়াসহ হাঁস-মুরগি। সবজি ক্ষেতসহ মাঠ ডুবে যাওয়ায় ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে খড়ের গাদা। একদিকে খাদ্য সংকট, অন্যদিকে মাথার উপরে চাল না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে পশুরা নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ১২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে সেই কেন্দ্রগুলোতে সহায়তা না পৌঁছায় দুর্ভোগে রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা। বেশ কিছু আশ্রয়কেন্দ্র স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় চললেও সরকারি সহায়তা না পৌঁছার অভিযোগ করছে তারা। আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা সরকারের কাছে জরুরি ত্রাণ সুবিধাসহ পুনর্বাসনের দাবি করেছেন।
শেরপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে গ্রামীণ সড়কগুলোতে পানি থাকায় ক্ষতি নিরূপণ করা যাচ্ছে না। উপজেলা পর্যায়ে আমাদের টিম রয়েছে। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে তারা কাজ করবে। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।
শেরপুর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, পাহাড়ি ঢলে তিন উপজেলার আমন ধান ও সবজির আবাদ নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি কমবেশি নির্ভর করবে পানি নেমে যাওয়ার উপর। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলার প্রায় সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে। পানি কমতে শুরু করেছে এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পৌঁছানো হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থা কাজ করছে। যে কোন পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
এসএস