লক্ষ্মীপুর: ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার (১২ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার সময় ৩৯ হাজার ৭৫০ নিবন্ধিত জেলে ২৫ কেজি করে ভিজিএফের চাল পাবে।
তবে এ সময়ে বরাদ্দ চাল লুটপাট না করে সঠিক তালিকা তৈরি করে দ্রুত তা বাস্তবায়নের দাবি জানান জেলেরা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরের ৭৬ কিলোমিটার ও চাঁদপুরের ২৪ কিলোমিটার মেঘনা এলাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এটি সফল করতে নদী এলাকার হাট-বাজারে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও সেমিনার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বরফ কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২২ দিন মৎস্য বিভাগ, কোস্টাগার্ড ও নৌ-পুলিশ সরকারি এ আদেশ সফল করতে কাজ করবে। নদীতেও নিয়মিত টহল চলবে। লক্ষ্মীপুর জেলায় ৫৪ হাজার ৬০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৭ হাজার ৭২৯ জন, রামগতিতে ২৫ হাজার ৯১ জন, কমলনগরে ১২ হাজার ৯৩৮ জন ও রায়পুরে আছেন ৭ হাজার ৬৯৮ জন জেলে। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে জেলার ৩৯ হাজার ৭৫০ জেলে পরিবারের মাঝে ৯৯৩.৭৫০ টন ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে সদরে ৩ হাজার ৭৫০ জনকে ১৪৩.৭৫ টন, রামগতিতে ১৭ হাজার জেলেকে ৪২৫ টন, কমলনগরে ১১ হাজার ২০০ জনকে ২৮০ টন ও রায়পুরে পাঁচ হাজার ৮০০ জেলেকে ১৪৫ টন চাল দেওয়া হবে।
সূত্র আরও জানায়, আগামীকাল ১৩ অক্টোবর থেকে মা ইলিশ সংরক্ষণে অভিযান শুরু হবে। এ সময় রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞাকালীন নদী এলাকার বরফ কারখানা ও মাছঘাটগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, সর্বোচ্চ ২ বছরের জেলসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকার কয়েকজন জেলে জানায়, তাদের পুঁজি কম, এজন্য সাগরে বেশি যেতে পারেনি। এর মাঝে মধ্যরাত থেকে নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। মেঘনায় জাল ফেলে যা ইলিশ মিলেতা তা দিয়েই তাদের জীবিকানির্বাহ করতে হয়েছে। এবার মেঘনায় ইলিশের পরিমাণ খুবই কম ছিলো। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে ২৫ কেজি চাল দিবে সরকার। এটা দিয়ে কি ভাবে আমাদের সংসার চলবে? দ্রব্যমূলের যে দাম।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন সোনালীনিউজে বলেন, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময়ে জেলেদের জন্য ২৫ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এরপরও যারা আইন অমান্য করে নদীতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাজিব কুমার সরকার সোনালীনিউজকে বলেন, ইতিমধ্যে মৎস্য অফিসের সাথে যোগাযোগ করে জেলেদের জন্য বরাদ্দ ভিজিএফের চাল জেলেদের মাঝে বিতরণ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধিত জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। কেউ বাদ যাবে না। নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেরা নদীতে যাবে না বলে আশা করেন তিনি। যারা আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল-জরিমানা করা হবে।
জেইউবি/এসআই