• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
দুই মাসে আটক ৩২৬

ভারতে পালানোর নিরাপদ রুট মহেশপুর সীমান্ত


আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ অক্টোবর ২০, ২০২৪, ০৪:৩৫ পিএম
ভারতে পালানোর নিরাপদ রুট মহেশপুর সীমান্ত

ঝিনাইদহ: ছাত্রজনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালানোর নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত। ফলে সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে একাধিক মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে প্রায় দুই’শ সদস্য সক্রিয় রয়েছে। লাখ লাখ টাকা নিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা আ’লীগের প্রভাবশালী নেতাকর্মী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্টদের পার করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইতিমধ্যে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় বিজিবির হাতে হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমি মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা, রোহিঙ্গা নারী ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তাসহ ৩২৬ জন আটক হয়েছেন। এছাড়াও আটক হয়েছেন ১৪ মানব পাচারকারী। 

তবে সীমান্তের মানুষরা বলছেন, মহেশপুর ৫৮ বিজিবি’র হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি মানুষ পার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। গ্রামবাসির বক্তব্য মহেশপুরের যাদবপুর, মাটিলা, সামন্তা, পলিয়ানপুর, বাঘাডাঙ্গা, খোশালপুর, শ্যামকুড়, শ্রীনাথপুর, কুসুমপুর ও লড়াইঘাট এলাকা দিয়ে মানবপাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুরের ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার হাসখালী ও উত্তর চব্বিশপরগার বাগদা থানা রয়েছে। আর বাংলাদেশের অংশ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা। ভারতে সঙ্গে ঝিনাইদহের ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে ৬৮ কিলোমিটার জুড়ে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। বাকি ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশের অংশ পুরোটাই অরক্ষিত। মাঠ-ঘাট, নদী-নালা থাকায় মানব পাচারকারীরা এই অংশ নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিজিবির টহল থাকার পরও স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেট নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে অপরাধীসহ নানা পেশার মানুষ ভারতে পাচার করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঝিনাইদহের আইনজীবী এ্যাড জাকারিয়া মিলন জানান, কোন বাংলাদেশি পাসপোর্টবিহীন ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাওয়ার সময় আটক হলে ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনে মামলা হয়। আর এই মামলার সাজা ৩ মাস কারাদণ্ড অথবা ৫০০ শত টাকা জরিমানা। ফলে আটক আসামিরা সহজেই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। আইন ও শাস্তির কঠোরতা না থাকায় অবৈধ পথে ভারতে আসা যাওয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

আইনজীবী শেখ আব্দুল্লাহ মিন্টু জানান, ভারত বা অন্য দেশের নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে আটক হলে শাস্তি হিসেবে এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান আছে। তাই এ দুটি মামলাই জামিনযোগ্য। দুই আইনেই অপরাধীর সাজা ও জরিমানা কম এবং জমিনযোগ্য হওয়ায় ধরা পড়লেও আসামি জামিনে বেরিয়ে আসে। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের ধরতে নিরুৎসাহিত হয়ে থাকেন। তাই আইন সংশোধন করে জরিমানা ও সাজার মেয়াদ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

মহেশপুর খালিশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শাহ মোঃ আজিজুস শহীদ জানান, সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং নিয়মিত নজরদারী করছে। মহেশপুরের সঙ্গে ভারতের ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার ৬৮ কিলোমিটার রয়েছে তারকাটার বেড়া। আর বাকি ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশের অংশ পুরোটাই অরক্ষিত। তিনি জানান, এখন বিজিবি’র নজরদারি পদ্ধতি বদল করা হয়েছে। যার সফলতাও ইতিমধ্যে পেয়েছি। মানব পাচার রোধে আমরাও সক্রিয় রয়েছি।

এসএস

Wordbridge School
Link copied!