লালমনিরহাট: লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে নির্মিত তিস্তা সেতুর টোল আদায়ের ইজারা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২১অক্টোবর) সাংবাদিকদের কাছে এসব বিষয়ের তথ্য আসলে নরেচড়ে বসেছে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
এর আগে গত বুধবার (১৬ অক্টোবর) দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাপলা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মোকছেদুর রহমান এক অভিযোগ আকারে রংপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়কের কাছে একটি লিখিত ভাবে আবেদন করেন।
সংশ্লিষ্ট তথ্য ও আবেদন থেকে জানা যায়, গত ৯ অক্টোবর লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে তিস্তা সড়ক সেতুর টোল আদায়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদারি কাজের দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ প্রদান থেকে টোল আদায়ের ইজারাদার নিয়োগের কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী যতবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতা ও সরকারের রাজস্ব আদায়ের হার বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে, ততবার কাউকেই ইজারার জন্য চূড়ান্ত ঘোষণা করা যাবে না। সরকারের রাজস্ব বাড়ার সম্ভাবনা থাকলে কর্তৃপক্ষ পূণঃদরপত্র আহ্বান করবেন। সেই নিয়ম অনুযায়ী গেলো ৯ অক্টোবর চৌদ্দতম দরপত্র আহ্বান করা হয়। এবারের ইজারা দরপত্রের আহ্বানে মোট ১১ জন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করলেও তা দাখিল করতে পেরেছেন মাত্র দুইজন। দরপত্র দাখিল করতে না পারার মধ্যে শাপলা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোকছেদুর রহমান গত ১৬ অক্টোবর রংপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক বরাবর অভিযোগ আকারে একটি লিখিত আবেদন করেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, দরপত্র ক্রয়ের পর গত ১০ অক্টোবর দুপুর ১২টায় দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। ওইদিন সকালে তার প্রতিনিধি মো: মাসুদ আহামেদ দরপত্র জমা দেয়ার জন্য রংপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের সার্কেল অফিসে গেলে ১০ থেকে ১২জন দুর্বৃত্তের একটি দল তার প্রতিনিধি মাসুদকে দরপত্র দাখিলে বাধা প্রদান করে। পরে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে তারা মাসুদের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেয়। এরপর দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় দুপুর ১২টা অতিবাহিত হলে দুর্বৃত্তরা তার মোটরসাইকেলের চাবি ফিরিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে শাপলা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোকছেদুর রহমান জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানই সর্বোচ্চ ৩৫ কোটি টাকা দরদাতা ছিল। তবে দাখিল হওয়া নুফা এন্টার প্রাইজের সর্বোচ্চ দর ছিল ৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এখানে সরকারের দেড় কোটি টাকার রাজস্ব ঘটতি সম্ভবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী আবারও দরপত্র আহ্বান করার নিয়ম থাকলেও তা না করে নুফা এন্টারপ্রাইজকে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে গণ্য করে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে তিনি অভিযোগ করেন।
বিগত ২০২১ সালের ইজারা আহ্বানে তিন বছরের জন্য প্রায় সাড়ে ৪৮ কোটি টাকায় রেগনাম বিল্ডার্স-পেন্টা গ্লোবাল নামের যৌথ প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়। সেইদিক থেকেও এবারের নুফা এন্টারপ্রাইজের ইজারায় গতবারের তুলনায় প্রায় পনের কোটি টাকা রাজস্ব কম পায় সরকার।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী মেসার্স রানা কনস্ট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারী মশিউর রহমান রনির প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন দাউদ বলেন, ‘আমি ৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরপত্র দাখিল করেছি এবং নুফা এন্টারপ্রাইজের দর ছিল ৩৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। কিন্তু টেন্ডার ওপেনের সময় কৌশলে নুফা এন্টারপ্রাইজের কোটেশনদাতার দর উদ্ধৃতি ফরম পরিবর্তন করে ৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে, যাতে তাঁদেরকে ইজারা দেয়া যায়।’
এ বিষয়ে মেসার্স শাপলা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মোখছেদুর রহমানের প্রতিনিধি মাসুদ আহাম্মেদ বলেন, ‘টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ দিনে আমার পথরোধ করে কতিপয় যুবক আমার মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে নেয় এবং আমাকে তাদের সাথে থাকতে বলে। পরে দরপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়ে গেলে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়।’
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মোমেন বলেন, যারা টেন্ডার বক্সে দরপত্র জমা দিয়েছেন তাদের মধ্যেই সর্বোচ্চ দরদাতাকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে সেটা আমরাও চাই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তাঁরা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, ‘পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে কিনা সে বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনস্থ।’
এসএস