• ঢাকা
  • সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

৫ দিনের মধ্যে পাথর কোয়ারী খুলে দেয়ার দাবি


সিলেট প্রতিনিধি অক্টোবর ২৮, ২০২৪, ০৯:১৪ পিএম
৫ দিনের মধ্যে পাথর কোয়ারী খুলে দেয়ার দাবি

সিলেট: আগামী ৫ দিনের মধ্যে সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী খুলে না দিলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। সোমবার (২৮ অক্টোবর) সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে ‘পাথর শ্রমিক বাঁচাও আন্দোলনের’ নেতৃবৃন্দ এ ঘোষণা দেন। এসময় তারা আগামী তিন দিনের মধ্যে আটককৃত বারকি নৌকা ফেরত ও মামলা প্রত্যাহারের জন্য আগামী ২৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি পেশ এবং আটককৃত বারকি নৌকা ফেরত এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে ১ নভেম্বর বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। এছাড়া ৩ নভেম্বর সিলেট ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক এবং সিলেট-জাফলং মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণাও দেন তারা। এরপরও যদি উপজেলা ও জেলা প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে তারা পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময় ও গোলটেবিল বৈঠক করে ভোখানাঙ্গা মিছিল, মানববন্ধন, গণসমাবেশ, ইউএনও ও ডিসি অফিস ঘেরাও, আমরণ অনশন, ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ এবং সর্বশেষ স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচী পালন করবেন বলেও জানান।

পাথর শ্রমিক বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা মো. জুলহাস উদ্দিন শিকদারের সভাপতিত্বে ও আন্দোলনের সদস্য সচিব সৈয়দ ফখরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পাথর শ্রমিক বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক সাংবাদিক আবুল হোসেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর ধরে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বৃহত্তর সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী ও বিভিন্ন বালু মহাল থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের প্রধানতম বারকী পেশায় সম্পৃক্ত দশ লক্ষাধিক মানুষ ও বিশ সহস্রাধিক ব্যবসায়ী আয়-রোজগার হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ইতিমধ্যে শত শত ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ঋণের বোঝা সইতে না পেরে ইতিমধ্যে আত্মহত্যা করেছে এবং অনেকে প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় চটফট করছে। অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছেন। দিনমজুর শ্রমিকেরা তাদের কর্মসংস্থান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে পরিবার পরিজন পরিচালনা করছেন। কিন্তু এলাকায় কাজকর্ম না থাকায় ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে হাজার হাজার শ্রমিক পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় মানুষের জান মাল, ভিটে বাড়ি, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছে না। অপর দিকে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এবং সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বৃহত্তর সিলেটের মানুষের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। আয় রোজগার না থাকায় প্রান্তিক এ শ্রমজীবী মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সিলেটের পাথর ও বালু মহাল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বর্তমানে নিরব দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের এ ক্রান্তিলগ্নে আয়-রোজগার বঞ্চিত সিলেটের কয়েক লাখ মানুষ। পাথর ও বালু উত্তোলনে জড়িত লক্ষ লক্ষ পাথর শ্রমিক, হাজার হাজার ট্রাক মালিক-শ্রমিক, ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিক, ব্যবসায়ী, বেলচা শ্রমিক, হেমার শ্রমিক ও লোড আনলোড শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় দিন যাপন করছে। হাতেগুনা কিছু শ্রমিক বিভিন্ন বালু মহালে পেটের দায়ে বালু উত্তোলন করতে গেলে প্রশাসন তাদের উপর অমানবিক, নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়।

তিনি বলেন, গত ১৪ অক্টোবর গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন টাস্কফোর্সের অভিযানের নামে জাফলং নদীর ঘাটে বেঁধে রাখা নিরীহ শ্রমিকদের ৭০০ বারকি নৌকা আটক করে জব্দ করে। অন্যদিকে ২০ অক্টোবর গভীর রাতে ধলাই নদীর ঘাটে বেঁধে রাখা ১৩৬টি নৌকা উপজেলা প্রশাসন আটক করে জব্দ করে। ২৫ অক্টোবর গভীর রাতে জাফলং বল্লাঘাট থেকে আরও ৩০টি বারকি নৌকা আটক করে জব্দ করে। গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বারকি শ্রমিকদের একমাত্র সম্বল বারকি নৌকা আটক করেই ক্ষান্ত হয়নি শতাধিক নিরীহ বারকি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরও করেছে। ওই মামলায় জাফলং এলাকার দুইজন সাবেক জনপ্রতিনিধি শাহ আলম স্বপন ও রফিকুল ইসলাম শাহপরাণকে আসামি করা হয়েছে। শ্রমিকরা তাদের রুজি রোজগারের একমাত্র সম্বল বারকি নৌকা হারিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন এবং মামলার ভয়ে চরম আতষ্কে ভুগছেন।

তিনি আরও জানান, কথিত পরিবেশ দূষণের দোহাই দিয়ে ভারতকে খুশি করার জন্য একটি পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে সিলেটের বৃহৎ পাথর কোয়ারী ভোলাগঞ্জ, উৎমা, বিছনাকান্দি, জাফলং, শ্রীপুর, লালাখাল, লোভাছড়া সহ সকল পাথর কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। ওই পরিবেশবাদী সংগঠন বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে ভারতের র’এর এজেন্টের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এবং দেশের মাফিয়া চক্রের গডফাদার দরবেশ বাবা খ্যাত সালমান এফ রহমান এবং সিলেট-৪ আসনের সাবেক সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ গংরা বিদেশ থেকে এলসির মাধ্যমে পাথর এনে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মূলত এদের কারণেই সিলেটের পাথর কোয়ারীগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশের পাথর মহালগুলো বন্ধ রেখে ভারত সহ বিভিন্ন দেশ থেকে রিজার্ভের ডলার খরচ করে পাথর আমদানী করা হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ সংকটে নিপতিত হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাওলানা আব্দুর রহিম, ইয়াছিন আলী, জহিরুল ইসলাম, আজমল হোসেন, শাহাদত হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক বাদল, জাফলংয়ের বিশিষ্ট পাথর ব্যবসায়ী জুবায়ের আহমদ, নানু মিয়া চৌধুরী, সুমন আহমদ, রাহাদুজ্জামান, বিছনাকান্দির পাথর শ্রমিক নেতা আমির হোসেন, ছয়ফুল আলম, সিলেট জেলা যুব অধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি জুবায়ের আহমেদ তুফায়েল, কোম্পানীগঞ্জের শ্রমিক নেতা ফয়জুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, কালা মিয়া, সুরুজ মিয়া, বাসির মিয়া, ইদ্রিছ মিয়া, গণমাধ্যম কর্মী মঈন উদ্দিন মিলন, ছাত্রনেতা লিটন মিয়া, আরিফ আহমেদ সুমন, ইকবাল হোসেন ইমন প্রমুখ।

এসএস

Wordbridge School
Link copied!