ময়মনসিংহ: সৌদিআরব থেকে বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে মোট ৮৭ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন তাহের উদ্দিন (৪৫) নামের এক প্রবাসী। তবে কিছুদিন আগে দেশে ফিরে তিনি দেখেন লাপাত্তা হয়ে গেছেন তার স্ত্রী মোছাম্মৎ তানিয়া সুলতানা। সাথে ফাঁকা হয়ে গেছে স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবটিও। এ ঘটনার পর স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় কোটি টাকা প্রতারণার মামলা করেন তাহের।
ওই মামলায় রিমান্ড শেষে সোমবার (২৮ অক্টোবর) আদালতে পাঠানো হয় অভিযুক্ত ওই গৃহবধূকে। এ সময় তার জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করে ফের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এর আগে ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের দেউলডাংরা গ্রামে। স্বামীর বাড়িতেই থাকতেন ওই প্রবাসীর স্ত্রী। তাদের সংসারে ছিল দুই ছেলে সন্তান।
জানা যায়, আয়-উন্নতির জন্য প্রায় ২০ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন নান্দাইলের তাহের উদ্দিন। চারবার অল্প সময়ের জন্য দেশে এসেছিলেন তিনি। এক যুগ আগে বিয়ে করে ফের চলে যান কর্মস্থলে।
মামলার এজাহার ও প্রবাসী তাহের উদ্দিনের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, তাহের উদ্দিন গত ২০০৪ সালে সৌদি আরবে যান। সেখানে তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি নেন। আট ঘণ্টা দায়িত্বের পর বাকি সময় তিনি বেশি রোজগারের জন্য গাড়ি পরিষ্কারের কাজ করতেন। একযুগ আগে তিনি দেশে ফিরে বিয়ে করেন পাশের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের মো. বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তানিয়া সুলতানাকে। বিয়ের পর ফের কর্মস্থল সৌদি আরবে চলে যান তিনি।
এ অবস্থায় তাহের উদ্দিন স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা পাঠতে থাকেন। চারবার আসা-যাওয়ার মধ্যেই জন্ম নেয় তাদের দুই ছেলে সন্তান। বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে স্ত্রী তানিয়া ছেলেদের নামে জমি ক্রয় ও নিজের গহনার জন্য বাড়তি টাকা দেয়ার দাবি জানালে, তাহের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে বেশ কয়েকবার মোটা অঙ্কের টাকা পাঠান। এরই মধ্যে বাড়ি থেকে তাহেরকে জানানো হয়, তার স্ত্রী তানিয়া হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
তাহের বিষয়টি নিয়ে তানিয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি সব মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন। এভাবেই চলতে থাকা অবস্থায় গত ৬ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফিরে দেখেন তার স্ত্রী তানিয়া বাড়িতে নেই। দুই সন্তানকে রেখেই তানিয়া নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। তানিয়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করাসহ শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ করে তার কোনো সন্ধান করতে পারেননি তাহের। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তানিয়া পালিয়ে গেছেন। যাওয়ার সময় তিনি আট ভরি স্বর্ণসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যান। এতে হিসাব করে দেখা যায় নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মোট এক কোটি ২১ লাখ টাকা নিয়ে যান স্ত্রী।
এই বিষয়ে তাহের উদ্দিন গত ১৯ সেপ্টেম্বর নান্দাইল থানায় তানিয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করেন। মামলায় তানিয়া গত ২০ অক্টোবর ময়মনসিংহ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি তানিয়ার বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে রিমান্ড শেষে সোমবার (২৮ অক্টোবর) তাকে আবারও জেল হাজতে পাঠানো হয়।
থানায় অবস্থান করার সময় অভিযুক্ত তানিয়া দাবি করেন, তিনি স্বামীর পাঠানো টাকা দিয়ে দুই ছেলের নামে জমি ক্রয় ছাড়াও ভরণপোষণে ব্যয় করেছেন। তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। পরে স্বামী তাকে সন্দেহ করায় নিজ উদ্যোগে তালাক দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, রিমান্ড শেষে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এসএস